Streams – Medicine & Allied studies | ফার্মাসি কোর্স
‘Health is Wealth’ – প্রাচীনকাল থেকেই প্রতিকূল প্রকৃতিসহ বিভিন্ন ভয়ংকর জীবজন্তু এবং প্রাণঘাতী রোগসমূহের সাথে মানুষ লড়ছে। জীবকূলের শ্রেষ্ঠ মানুষ তার বুদ্ধি, দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে এই প্রতিকূলতাগুলিকে জয় করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। কখন হারছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এইসব বাঁধা সে দক্ষতার সাথে অতিক্রম করছে। যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, মানুষের গড় আয়ুর বৃদ্ধি পাওয়া।
আমাদের পূর্বপুরুষরা নিজেদের সুস্থ রাখতে শুধুমাত্র গাছগাছালি থেকেই বিভিন্ন রোগের ওষুধ প্রস্তুত করতো, কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতির হাত ধরে খুব সহজেই জটিল থেকে জটিলতর রোগের ওষুধ প্রস্তুত হচ্ছে। আর এই মহান কাজে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তারা ফার্মাসিস্ট।
Table of Contents
ফার্মাসি কোর্স কি?
ওষুধ নিয়ে পড়াশোনা করাকে ফার্মাসি বলে; ফার্মাসি স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা। ফার্মাসি রসায়নের সাথে জীববিজ্ঞানের একটি যোগসূত্র হিসাবে কাজ করে। ফার্মাসির মূল বিষয় হল ঔষধ ও কসমেটিকসের প্রস্তুতি এবং এদের নিরাপদ ব্যবহার ও সঠিক বিতরণ।
ফার্মাসিস্ট কাকে বলে?
ফার্মাসি নিয়ে যারা পড়াশোনা করে তাদের আমরা ফার্মাসিস্ট বলি। ফার্মাসিস্ট বা ঔষুধবিদ বা ড্রাগিস্ট হলেন একজন পেশাদার ঔষধ প্রস্তুত কারক। ফার্মাসিস্টের কাজ হল ওষুধ প্রস্তুতি, ওষুধের বৈশিষ্ট্য, তার প্রভাব ইত্যাদি দেখা এবং ওষুধের ব্যবহার জানা। ফার্মাসিস্ট রোগীদের ফার্মাসিউটিকাল যত্ন ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করে।
ঐতিহাসিকভাবে, ফার্মাসিস্টদের মৌলিক ভূমিকা ছিল রোগীদের নির্ধারিত ওষুধের জন্য ডাক্তারদের কাছে ওষুধ পরীক্ষা এবং বিতরণ করা। আধুনিক সময়ে, ফার্মাসিস্টরা রোগীদের এবং স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীদের নির্বাচন, ডোজ এবং ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে পরামর্শ দেয়। ফার্মাসিস্ট হল ওষুধ এবং রোগীর মধ্যে সমন্বয়সাধক।
কিভাবে পড়বে ফার্মাসি কোর্স?
উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগ অর্থাৎ পদার্থবিদ্যা (Physics), রসায়নবিদ্যা (Chemistry), জীববিদ্যা (Biology) ও অঙ্ক (Mathematics) নিয়ে পড়াশোনা করলে এবং উচ্চমাধ্যমিকে 50% নাম্বার থাকলে ফার্মাসি নিয়ে পড়াশোনা করা যায়।
Diploma in Pharmacy (D. Pharm)
D. Pharm কোর্সের সময়সীমা 2 বছর। সর্বনিম্ন বয়সসীমা হল 17 বছর। এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য কিছু প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়, সেই পরীক্ষাগুলি হল – UPSEE, AU AIMEE, GUJCET ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গে D Pharma কোর্স পড়ার জন্য WBSCTE বোর্ড দ্বারা পরিচালিত Pharmacy Entrance Test (PET) পরীক্ষা দিতে হয়।
Bachelor in Pharmacy (B. Pharm)
এটি একটি স্নাতক স্তরের 4 বছরের কোর্স যেটি All Indian Council of Technical Education (AICTE) এবং the Pharmacy Council Of India (PCI) কর্তৃক স্বীকৃত কোর্স। বি. ফার্ম কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য উচ্চমাধ্যমিকে বা (10+2) এর সমতুল কোন পরীক্ষায় কম করে 50% marks থাকতে হবে এবং আবশ্যিক বিষয় হিসেবে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং বায়োলজি বা জীববিদ্যা অথবা বায়োটেকনোলজি পড়তেই হবে। বয়সসীমা ন্যূনতম 17 বছর হতেই হবে। ভারতবর্ষে বি. ফার্ম পড়ার জন্য যে প্রধান প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলি হয় সেগুলি হল, NIPER JEE পরীক্ষাটি ন্যাশানাল লেভেলের পরীক্ষা। এছাড়াও রাজ্য ভিত্তিক বেশ কিছু পরীক্ষা হয় যেমন, – WBJEE, OJEE, UKSEE ইত্যাদি।
Master in Pharmacy (M. Pharm)
M. Pharm হল 2 বছরের একটি কোর্স। B. Pharm সম্পূর্ণ করার পর এই কোর্সটি করা যায়। PCI (Pharmacy Council of India) দ্বারা নির্ধারিত নাম্বার নিয়ে B. Pharm কোর্স উত্তীর্ণ হতে হবে। বি এম ফার্ম পড়ার জন্য যে প্রধান প্রবেশিকা পরীক্ষাগুলি হয় সেগুলি হল, GPAT, AP PGECET, OJEE, HPCET, BITS ইত্যাদি।
ভারতের কিছু বিখ্যাত ফার্মাসির কলেজ –
• JAMIA HAMDARD UNIVERSITY, NEW DELHI
• PANJAB UNIVERSITY – [PU], CHANDIGARH
• PARUL UNIVERSITY, VADODARA
• NATIONAL INSTITUTE OF PHARMACEUTICAL EDUCATION AND RESEARCH – [NIPER], MOHALI
• MANIPAL COLLEGE OF PHARMACEUTICAL SCIENCES – [MCOPS], MANIPAL
ফার্মাসিতে কি কি পড়তে হয়?
ফার্মাসি কোর্সে যে যে বিষয়গুলি পড়ানো হয়, সেগুলি হল –
• Human Anatomy
• Human physiology
• Pharmaceutics
• Inorganic chemistry
• Communication skills
• Biology
• Remedial Mathematics
• Biochemistry
• Physics Pharmaceutics
• Pharmaceutics Microbiology
• Pharmaceutics Engineering
• Organic Chemistry
• Pharmacology
• Pharmacognosy & Phytochemistry
• Medicinal Chemistry
• Herbal Drug Technology
• Cosmetic Science
• Cell and Molecular biology
• Pharma Marketing Management
• Biostatistics and Research
• Industrial Pharmaceutics
• Herbal Drug Technology
• Biopharmaceutics and pharmacokinetics
• Pharmacy Practice
• Quality control and standardisation of Herbals
• Quality assurance ইত্যাদি।
ফার্মাসি কোর্সের ভবিষ্যৎ কেমন?
জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, শারীরিক পরিশ্রম না করা, পরিবেশ দূষণ প্রভৃতি কারণে মানুষের স্বাস্থ্যের মান বর্তমানে অত্যন্ত খারাপ তাই স্বাস্থ্য পরিষেবা মূলক ইন্ডাস্ট্রিগুলির ভবিষ্যত উজ্জ্বল।
বিভিন্ন হসপিটালে বড় বড় ওষুধের আউটলেটে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করা হয় এবং শিক্ষকতা, গবেষণা বা দেশের বাইরেও কাজ করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। যেহেতু তরুণ প্রজন্মের কাছে খুবই জনপ্রিয় এই পেশা, তাই চাকরির ক্ষেত্রও ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে।
বর্তমানে পোশাক শিল্পের পরেই ফার্মেসি শিল্পের অবদান। মোট চাহিদার 97-98 শতাংশ ওষুধ আমদের দেশেই তৈরি হচ্ছে। সুতরাং চাহিদার গ্রাফ কিছুটা বাড়ার দিকেই বলা যেতে পারে।
আরো পড়ুন – পশ্চিমবঙ্গে ফার্মাসিস্ট কিভাবে হওয়া যায়?
ফার্মাসিস্টের কাজ কি?
ফার্মাসি পড়ে যে ধরণের কাজের সুযোগ রয়েছে, সেগুলি হল –
• Pharmacist
• Pharmacologist
• Food and cosmetic products development scientist
• Clinical Trial Research Associate
• Pharmacy – hospital or personal
• Academics- lecturer
• Hospital and clinical pharma Consultancy
• Herbal cosmetic manufacturer
• Public testing lab ইত্যাদি।
ভবিষ্যতে কাজের সুযোগ (Industry Analysis)
আয়তন এবং মূল্যের দিক থেকে বিচার করলে গোটা পৃথিবীর মধ্যে ভারত তৃতীয় স্থানে রয়েছে। এই দেশে প্রায় 3,000 এর ওপরে যথেষ্ট ভালো ও মজবুত নেটওয়ার্কিং এর ওষুধ কোম্পানি রয়েছে। এছাড়াও 10,500 টি ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট রয়েছে।
2021 সালে ভারতীয় ওষুধের বহির্মুখী রপ্তানির ব্যবসা প্রায় 24.44 ইউ এস ডলারে পৌঁছেছে (FY21)।
আশা করা হচ্ছে আগামী 2030 সালের মধ্যে এই গ্রাফ প্রায় 120-130 বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছবে।
The Indian pharmaceutical industry হল আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এবং মূল্যের দিক থেকে 14তম বৃহত্তম ইন্ডাস্ট্রি।
কয়েকটি বিখ্যাত ভারতীয় ওষুধ কোম্পানির নাম এখানে দেওয়া হল –
• Sun Pharmaceuticals
• Divi’s Laboratories
•Dr. Reddy’s Laboratories
• Cipla ইত্যাদি।
আরো পড়ুন – ফার্মাসি কোর্স করে কত বেতন পাওয়া যাবে?
ফার্মাসি পড়ে কি সরকারি চাকরি পাওয়া যায়?
বি. ফার্ম করা থাকলে সরকারী চাকরির অনেক সুযোগ আসে। সরকারী চাকরি করতে চাইলে ফার্মাসিস্ট বা অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর হিসেবে কাজ শুরু করা যেতে পারে। শিক্ষাগত ক্ষেত্রে অধ্যাপনা করতে গেলে এম. ফার্ম করাটা জরুরী।
কিছু সরকারি দপ্তরে বিভিন্ন পদে ফার্মাসিস্ট নিয়োগ করা হয়, সেগুলি হল –
• FDA
• Drug inspector
• Food inspector
• Government analyst ইত্যাদি।
কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থাগুলি হল –
• PCI
• Research institute
• Government hospital
• Railway pharmacist
• Air force/army pharmacists
• Academics government colleges
পর্ব সমাপ্ত! আরো পড়ুন – ফার্মাসিউটিকাল কোর্স | B.Tech in Pharmaceutical Technology
নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য ফলো করুন ↓
WhatsApp Channel | Telegram Channel | Facebook Page
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer।
- নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error।