Category – Tips
সফল কেরিয়ার গড়ে তোলার আগে প্রয়োজন সঠিকভাবে কেরিয়ার প্ল্যানিং করা। আমরা সাধারণত স্কুল জীবন থেকেই কেরিয়ার প্ল্যানিং শুরু করি, কারণ আমরা ভবিষ্যতে কি করবো সেই অনুযায়ী মাধ্যমিকের পর স্ট্রিম বেছে নিই। সুতরাং, বলা যায় মাধ্যমিকের পর সাবজেক্ট বেছে নেওয়াই কেরিয়ার প্ল্যানিং এর প্রথম ধাপ।
আজকের প্রবন্ধে আমরা এই কেরিয়ার প্ল্যানিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। তাহলে শুরু করা যাক আজকের আলচনা।
Table of Contents
কেরিয়ার প্ল্যানিং কি
কেরিয়ার প্ল্যানিং হল ভবিষ্যতে তুমি কি হতে চাও তারই পরিকল্পনা। তোমার ভালোলাগা, শক্তি, দুর্বলতা ইত্যাদি বিষয় মাথায় রেখে তুমি কোন পেশায় যেতে চাও সেই লক্ষ্য স্থির করাই হল কেরিয়ার প্ল্যানিং। কেরিয়ার প্ল্যানিং একটি চলমান প্রক্রিয়া অর্থাৎ এটি চলতেই থাকে।
কেরিয়ার প্ল্যানিং করার প্রয়োজন হয় কেন?
কেরিয়ার প্ল্যানিং করার প্রয়োজনীয়তা –
- যেকোনো কাজ সঠিকভাবে প্ল্যান করে করলে তা তাড়াতাড়ি এবং নির্ভুল হয়। তাই আগে থেকে কেরিয়ার প্ল্যানিং করলে তুমি সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে একটি সুন্দর সফল কেরিয়ার গড়ে তুলতে পারবে।
- কেরিয়ার প্ল্যানিং তোমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। নিজের লক্ষ্য নিয়ে সব সময় স্থির থাকতে পারবে, অন্য কেউ তাড়াতাড়ি কেরিয়ারে সফলতা অর্জন করলো, তা দেখে নিজের লক্ষ্য পরিবর্তন করবে না।
- কেরিয়ার প্ল্যান করা থাকলে তুমি কখনই হতাশ হবে না, কারণ তুমি জানো যে তুমি কি করতে চলেছ এবং কবে তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে, তাই নিজেকে শান্ত রাখতে পারবে এবং নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে পারবে।
এ.পি.জে আব্দুল কালাম তার উক্তিতে বলেছিলেন যে “স্বপ্ন সেটা নয় যেটা তুমি ঘুমিয়ে দেখো স্বপ্ন সেটা যা তোমাকে ঘুমোতে দেয় না।”
তাঁর উক্তি ধরে আমরা বলতে পারি – কেরিয়ার প্ল্যানিং-এর মাধ্যমে নিজের স্বপ্ন খুঁজে নেওয়া এবং যতক্ষণ না তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করছো ততক্ষণ লেগে থাকাই তোমাকে সফলতার পথে নিয়ে যাবে।
জেনে নাও – পড়ার রুটিন কিভাবে তৈরি করবে?
কেরিয়ার প্ল্যানিং কিভাবে করবো?
সাধারণত মাধ্যমিকের পর থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা কেরিয়ার প্ল্যানিং অর্থাৎ কি করবে ভবিষ্যতে তা ভাবা শুরু করে। কিন্তু সপ্তম – অষ্টম শ্রেণি থেকেই শিক্ষার্থীদের কেরিয়ার প্ল্যান করা উচিত। কারণ মাধ্যমিকের পর যে যেই স্ট্রিম নিয়ে পড়াশোনা করবে সেই বিষয়গুলিতে জোর দিতে পারবে; যেমন – কেউ যদি বিজ্ঞান ভবিষ্যতে কেরিয়ার গড়ার কথা বলে তাহলে তাকে অঙ্ক, জীবনবিজ্ঞান ও ভৌতবিজ্ঞান ইত্যাদি বিজ্ঞনবিষয়ক বিষয়গুলি ভালো করে মননিবেশ করতে হবে। আবার যদি কেউ পরবর্তী সময়ে বাণিজ্য বিষয়ক শাখায় যেতে চায়, সেক্ষেত্রে গণিত থাকে ভালোভাবে অভ্যাস করতে হবে।
এবার বলি কেরিয়ার প্ল্যানিং কিভাবে করতে হয়?
নির্দিষ্ট কিছু বিষয় যেমন – তোমার পছন্দ, কোন পেশায় সুযোগ বেশি, কেরিয়ারে সফল করার জন্য কি কি স্টেপ নেওয়া প্রয়োজন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে কেরিয়ারের প্ল্যান করা হয়।
কিভাবে করবে কেরিয়ার প্ল্যানিং তা নীচে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হল –
স্ব-মূল্যায়ন (Self-Assessment)
নিজের পছন্দ, আগ্রহ, প্রতিভা, দক্ষতা বেছে নিয়ে তুমি ভবিষ্যতে কি করতে চাও, তা নির্ধারণ করো। এই ক্ষেত্রে তুমি SWOT অ্যানালাইস (SWOT Analysis) এর সাহায্য নিয়ে নিজের সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে পারো।
SWOT এর এক একটি অক্ষর একটি করে ইংরেজি শব্দ, যথা –
S- Strength
W- Weakness
O- Opportunities
T- Threats
তোমার শক্তি (Strength), দুর্বলতা (Weakness) বুঝে নাও। তোমার শক্তির উপর নির্ভর করে কোথায় কোথায় সুযোগ (Opportunities) রয়েছে এবং দুর্বলতা অনুযায়ী কোথায় তোমার ভীতি বা ভয় (Threat) রয়েছে তা বিবেচনা করে দেখে নিজের কেরিয়ার প্ল্যানের প্রথম ধাপ সম্পন্ন করো।
রিসার্চ
বিভিন্ন পেশা সম্পর্কে রিসার্চ করা। তোমার পছন্দের বিভিন্ন পেশায় কি ধরণের কাজ, সুযোগ ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে রিসার্চ করে তথ্য জেনে নেওয়া। এর মাধ্যমে তুমি তোমার কেরিয়ার গড়ে তোলার জন্য সঠিক পথ খুঁজে পাবে।
লক্ষ্য স্থির করা
উপরের ধাপ দুটি থেকে নিজের শক্তি, দুর্বলতা বুঝে নিলে এবং বিভিন্ন পছন্দের পেশা সম্পর্কে খোঁজখবর করে নিলে। এবার তৃতীয় ধাপ হল তোমার লক্ষ্য স্থির করা।
একটু সময় নিয়ে ভাবো তুমি আজ থেকে 5-10 বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চাও। তারপর সিদ্ধান্ত নাও যে কোন পথে কেরিয়ার গড়ে তুলতে এবং কি হতে চাও।
[বিঃ দ্রঃ একটি কথা মনে রাখবে কেরিয়ার গড়ে তোলার জন্য একটি মূল্য লক্ষ্য তো থাকবে কিন্তু তার সাথে সেই সংক্রান্ত অন্য অপশনও রাখতে পারো। কোনো কারণে একদিকে না হলে অন্যদিকে যেতে পারবে। তাই অপশন রেখেই কেরিয়ার প্ল্যানিং করবে।]
পরিকল্পনা শুরু করা
লক্ষ্য স্থির হওয়ার পর এবার সেটি কিভাবে করবে তার প্ল্যান করা। যদি তুমি ডাক্তার বা মেডিকেল দিকে যেতে চাও তাহলে তোমাকে সায়েন্স নিয়ে পড়তে হবে তাহলে মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিষয়গুলিতে ভালো নাম্বার পেতে হবে। আবার যদি তুমি ব্যাঙ্কিং এর দিকে যাও তাহলে মাধ্যমিকের পর কমার্স নিয়ে পড়লে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে।
মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর জন্য বিভিন্ন এন্ট্রান্স যেমন – NEET, WBJEE বা JEE (Main) পরীক্ষাগুলিতে র্যাঙ্ক করতে হয়। পরিকল্পনার মধ্যে প্রবেশিকা পরীক্ষায় র্যাঙ্ক, কোন কোন বিষয় নিয়ে পড়বে, ইত্যাদি সব কিছু থাকবে।
জব সার্চ করা
তুমি যে দিক বেছে নিয়েছো, সেই দিকের বিভিন্ন জব সার্চ করে দেখো কোন দিকে বেশি সুযোগ রয়েছে। যেমন – ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে কোন বিষয়ে অর্থাৎ সিভিল, মেকানিক্যাল, কম্পিউটার সায়েন্স, ইলেকট্রিকাল ইত্যাদির মধ্যে কোথায় বেশি চাকরির সুযোগ রয়েছে, কি কি ধরণের চাকরী রয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সার্চ করে দেখে নাও।
গাইডেন্স নেওয়া
কেরিয়ার প্ল্যান করার সময় অতি অবশ্যই কেরিয়ার কাউন্সেলার বা মেন্টরদের থেকে সাহায্য নেবে। তাদের মতামত তোমাকে তোমার কেরিয়ার গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
তোমরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে তোমাদের বন্ধু ‘কেরিয়ার বন্ধু’র থেকে কেরিয়ার গাইডেন্স নিতে পারো। তোমরা কেরিয়ার বন্ধুর (careerbondhu.com) ওয়েবসাইটে গিয়ে কেরিয়ার সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন করতে পারো, ‘কেরিয়ার বন্ধু’ তোমাদের মেইলের মাধ্যমে তার উত্তর পাঠিয়ে দেবে।
কেরিয়ার প্ল্যানিং পরবর্তী কাজ
কেরিয়ার প্ল্যানিং শুধু করে রাখলেই হবে না। কেরিয়ার প্ল্যানিং -এর প্রত্যেকটি ধাপ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। কেরিয়ার প্ল্যানিংকে সফল করার জন্য যা যা প্রয়োজন সব কিছু করতে হবে।
তাহলে এখনই নিজের কেরিয়ার প্ল্যান তৈরি করা শুরু করে দাও। তোমারদের পছন্দের কেরিয়ার গড়ে সফলতা অর্জন করার জন্য আগাম শুভ কামনা রইল।
আশা করি আমাদের এই পোস্টটি তোমাদের ভালো লেগেছে এবং ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে এই প্রবন্ধটি অবশ্যই শেয়ার করো। আর এই রকম আর পোস্ট পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে https://careerbondhu.com/ নিয়মিত চোখ রাখো। টেলিগ্রামের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রবন্ধ পেতে জয়েন করো আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল – [https://t.me/careerbondhu](https://t.me/careerbondhu).
পর্ব সমাপ্ত!
কেরিয়ার ও ব্যবসা সম্পর্কিত কোনো প্রশ্ন থাকলে বা কি রকম ধরনের পোস্ট চাইছো, তা নীচের ছবিটায় ক্লিক করে জানাতে পারো↓
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer।
- নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error।