Category – Business
বর্তমান দিনে বহু মানুষই কর্মজীবনে অত্যন্ত ব্যস্ত। আবার বহুক্ষেত্রে বাড়ির বয়স্করা বাড়িতে একাই থাকেন। এছাড়াও অনেক মানুষই এই বিশ্বায়নের যুগে বাড়িতে বা মেসে উচ্চশিক্ষা বা কর্মসূত্রে একাই থাকেন, এই সব ক্ষেত্রেই খাওয়া দাওয়ার জন্য বহুমানুষ খাবারের হোম কিচেনের খাবারের উপর নির্ভর করে থাকেন।
Table of Contents
হোম কিচেন বা হোম প্যাক ব্যবসা কি?
তাই আজকের দিনে হোম কিচেন ব্যবসা বা হোম প্যাক সার্ভিস বেশ লাভজনক হয়ে উঠেছে। এই ব্যবসার মূল কাজ হল অর্ডার অনুযায়ী রান্না করে গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া । তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহকের দৈনন্দিন পছন্দের উপর নির্ভর করে ঘরোয়া রান্নাই পরিবেশন করা হয়।
কেন হোম কিচেন ব্যবসা করবেন?
বিভিন্ন কারণে বাড়ি থেকে দূরে থাকা বহু মানুষের ক্ষেত্রে খাবারের প্রয়োজনে হোটেলই ভরসা। হোটেলে রোজ খাওয়া যেমন অস্বাস্থ্যকর, তেমনি ব্যয়বহুল। তাই বহু মানুষ সাধ্যের মধ্যে সুস্বাস্থ্যকর ঘরোয়া খাবারকেই বর্তমানে প্রাধান্য দেয়। যথার্থ দাম রেখে এই ব্যবসা খুললে, কাস্টমারের অভাব হবে না।
আরো পড়ুন – কেক বেকারির ব্যবসা সম্পর্কে
Strength
– ব্যবসাটি স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এবং নিজের বাড়ি থেকেই ব্যবসাটি শুরু করা যায়।
– এই ব্যবসায় অগ্রিম বুকিং নিয়ে কাজ করা হয়, তাই খাবার নষ্ট হবার পরিমাণ অন্যান্য খাবার ব্যবসার তুলনায় কম।
Weakness
অনেক রকমের পদ রান্না করতে হয়। তাই বেশি পরিমাণে গ্রাহক না পেলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।
Opportunity
বর্তমান সময়ে মানুষ নিজের স্বাস্থ্যের জন্য স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য খোঁজে, যা সাধ্যের মধ্যে রেস্টুরেন্টে পাওয়া সম্ভব নয়।
Threat
এই ব্যবসা এখনকার বাজারে রমরমা, তাই প্রতিযোগিতা খুব বেশি।
কারা করবেন হোম কিচেন ব্যবসা?
এই হোম কিচেন ব্যবসা তাদেরই করা উচিত যাদের রান্না সম্পর্কে জ্ঞান আছে। তবে মনে রাখতে হবে রান্না যত বেশী সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর হবে গ্রাহকের সংখ্যা তত বাড়বে এবং ব্যবসা খুব ভালো চলবে। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও মহিলা এই ব্যবসাটি শুরু করতে পারেন।
হোম কিচেন ব্যবসায় সাফল্যলাভের জন্য কি কি দক্ষতার প্রয়োজন?
হোম কিচেন ব্যবসায় সাফল্যলাভের জন্য যে দক্ষতাগুলি থাকা আবশ্যক, সেগুলি হল –
- খাবারের গুণগত মান সঠিক রাখা আবশ্যক। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে গ্রাহকরা মাসিক চুক্তিতে খাবার খান। তাই প্রতিদিন আপনাকে গুণগত মান বজায় রেখে খাবার বানাতেই হবে।
- নতুনত্ব কিছু করার চিন্তা ভাবনা থাকা প্রয়োজন। যেহেতু আপনার গ্রাহকরা দীর্ঘদিন ধরে আপনার থেকে খাবার খাবেন, তাই যাতে গ্রাহকদের একঘেয়েমি না আসে তা মাথায় রেখে আপনাকে মেনু ঠিক করতে হবে।
- সঠিকভবে যোগাযোগ রাখা। ফোনের মাধ্যমে বেশির ভাগ গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করতে হয়, তাই ফোন ব্যবহার, ভালোভাবে কথা বলার দক্ষতা এবং লোকাল অঞ্চলে অনলাইন পরিষেবা দেওয়া যেতে পারে।
- খাবার পৌঁছে দিয়ে আসার জন্য কর্মী নিয়োগ করা যেতে পারে, অবশ্য শুরুতে নিজেই ডেলিভারি করতে পারেন। দুটি ক্ষেত্রেই খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য সাইকেল, মোটর গাড়ি ইত্যাদি চালাতে জানা একান্ত আবশ্যক।
- ব্যবসা করার দৃঢ় মানসিকতা থাকা প্রয়োজন।
কিভাবে করবেন হোম কিচেন ব্যবসা?
আপনি হোম কিচেন বা হোমপ্যাক ব্যবসা শুরু করার আগে কয়েকটি বিষয় মনে রাখবেন।
– আপনি যেখানে ব্যবসা শুরু করতে চাইছেন সেখানে হোম প্যাক অর্থাৎ প্রতিদিনের খাবার কিনে খাবার মত গ্রাহক থাকতে হবে। কাছাকাছি কলেজ হোস্টেল, অফিস ইত্যাদি থাকলে এই ব্যবসায় দ্রুত সাফল্য পাবেন।
– প্রথমিকভাবে খরচ কমানোর জন্য লোক না নিয়ে নিজেকেই রান্না করতে হতে পারে। তাই আপনার রান্না সম্পর্কে ধারণা থাকা প্রয়োজন।
নাম ভাবনা
আপনার ব্যবসার একটি নাম ভাবুন, মনে রাখবেন এই নাম যেন সহজে মনে রাখা যায় এবং ঐ নাম যেন আপনার ব্যবসার ভাবনার সাথে মেলে। নামের শেষে কিচেন, রান্নাঘর ইত্যাদি শব্দ রাখলে গ্রাহকরা সহজেই আপনার ব্যবসা সম্পর্কে বুঝত পারবে।
আরো পড়ুন – শাড়ির ব্যবসা সম্পর্কে
লাইসেন্স
মনে রাখবেন, ভারতবর্ষে খাবারের ব্যবসা করতে গেলে ফুড লাইসেন্স বা FSSAI Registration নেওয়া বাধ্যতামূলক। তাই অবশ্যই FSSAI Registration করবেন। এখন অনলাইনে খুব সহজেই সামান্য টাকা ব্যয় করে ফুড লাইসেন্স নিয়ে নিতে পারবেন। তাছাড়া, মনে রাখবেন Zomato, Swiggy ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মে খাবার বিক্রি করতে চাইলে কিন্তু আপনাকে FSSAI Registration নিতেই হবে।
স্থান নির্বাচন
আমরা ধরে নিচ্ছি এই ব্যবসাটি আপনি আপনার বাড়ি থেকে করবেন। তাই বাড়ির এমন জায়গায় ব্যবসার রান্নাঘর বানান, যেখানে আপনি সাচ্ছন্দে বেশি পরিমাণে রান্না করতে পারবেন, খাবার প্যাক করতে পারবেন এবং যিনি ডেলিভারি করবেন তার হাতে তুলে দিতে পারবেন।
মেনু নির্বাচন
আপনি প্রাথমিকভাবে কিছু মেনু নির্ধারণ করুন। যেমন ধরুন ভেজ থালি, নন ভেজ থালি, এগ থালি ইত্যাদি। এবার প্রতিটি মেনুতে কি কি খাবার থাকবে তার লিস্ট করুন। এটা আপনাকে দাম নির্ধারণ করতে সাহায্য করবে।
আমাদের Facebook পেজ লাইক করার অনুরোধ রইল। ↓
দাম নির্ধারণ
এটা ব্যবসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ এই হিসাব সঠিক থাকলে তবেই আপনি লাভ করতে পারবেন।
আপনার প্রতিটি মেনুর ক্ষেত্রে দাম এই ভাবে ভাগ করে নিতে পারেন –
কাঁচামাল (চাল, ডাল, ডিম, মাংস ইত্যাদি) – 20%
জ্বালানি (ইলেকট্রিক ও গ্যাসের খরচ) – 10%
লেবার খরচ (20%)
ডেলিভারি খরচ (30%)
বিপণন (10%)
লাভ (10%)
এটা একটা নমুনা হিসাব আপনাদের জন্য দেওয়া হয়েছে। আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে এই হিসাবগুলি আলাদা হতেই পারে।
মনে রাখবেন এই ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনার খাবার তৈরির পরিমাণ যত বাড়বে, কাঁচামাল বাদে অন্য সব খরচ কমবে। হিসাব ভালোভাবে বুঝে নেবার জন্য প্রতিটি খরচ ভালোভাবে নোট করুন। কোন ক্ষুদ্র খরচের হিসাবও বাদ দেবেন না।
আরো পড়ুন – কোচিং সেন্টার ব্যবসা সম্পর্কে
মার্কেটিং বা বিজ্ঞাপন
আপনার ব্যবসার পরিষেবা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হল আজকের দিনে অন্যতম একটি কঠিন কাজ। তাই এই কাজটি আপনাকে মনোযোগ সহকারে করতে হবে।
আপনার ব্যবসার কথা সম্ভাব্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য আপনি কিছু বিজ্ঞাপন করতে পারেন।
ব্যানার ও ফ্লেক্স – আপনি যেখানে ব্যবসাটি করছেন, সেখানে আপনার নাম, ঠিকানা এবং ফোন নম্বর সহযোগে ব্যানার লাগান। সম্ভব হলে কিছু জায়গায় ব্যানার লাগাতে পারেন।
লিফলেট ছাপানো – নিজের ব্যবসার ডিটেইলস এবং দাম সহ মেনু প্রিন্ট করে তা আশে – পাশের বাড়িগুলিতে দিতে পারেন। সাধারণত বয়স্ক গ্রাহকরা লিফলেট ভীষণ পছন্দ করেন।
WhatsApp মার্কেটিং – প্রতিদিন আপনি যে ধরণের খাবার বানাচ্ছেন তা নিজের status এ দিতে থাকুন। নিজের গ্রাহকদের গ্রুপ তৈরি করে তাতে আপনার নতুন মেনুর আপডেট দিতে থাকুন, এতে আপনার ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি পাবে।
গ্রাহকদের থেকে গ্রাহক সংগ্রহ – আপনার একজন সন্তুষ্ট গ্রাহক আপনার সবথেকে ভালো বিজ্ঞাপন হয়ে উঠতে পারেন। আপনার গ্রাহকদের সাথে কথা বলুন, এবং তাদের মাধ্যমে অন্য গ্রাহকদের কাছে পৌঁছানর চেষ্টা করুন।
খাবার পরিবহন
খাবার তৈরির পর তা সঠিকভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে আপনাকে। তাই খাবার বানানোর পর তা কিভাবে প্যাক করবেন এবং তা সঠিক সময়ে কিভাবে পৌঁছে দেবেন তা নিয়ে বিশেষ ভাবে চিন্তা করবেন।
আরো পড়ুন – চা ব্যবসা সম্পর্কে
গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ
মনে রাখবেন এই ব্যবসায় আপনার গ্রাহকরা দীর্ঘমেয়াদি সময়ের জন্য থাকবেন। সুতরাং আপনার সব কাজ যেন গ্রাহকদের কথা মনে রেখে হয় তা দেখতে হবে। প্রতিটি গ্রাহকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। খাবার কেমন হচ্ছে তা নিয়মিত জানুন, কোনো অভিযোগ থাকলে তা মিটিয়ে নেবার চেষ্টা করুন, উৎসবে ও পার্বণে গ্রাহকদের শুভেচ্ছা জানান। আপনার গ্রাহকরা যদি সন্তুষ্ট হন, তা হলে আপনার ব্যবসার বৃদ্ধি কেউ আটকাতে পারবে না।
পর্ব সমাপ্ত!
নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য ফলো করুন ↓
WhatsApp Channel | Telegram Channel | Facebook Page
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer।
- নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error।