Coaching center
Category – Business

বৈদিক যুগে চতুরাশ্রম প্রথার প্রথম ধাপ ব্রহ্মচর্যে ছাত্রদের গুরুগৃহে গিয়ে পাঠ অধ্যায়ন করতে হত। ছাত্ররা বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যায়ন করতেন। গুরু ছিলেন ঈশ্বরের সমতুল।

যুগ পালটেছে, বদলেছে মানুষের জীবন ধারণের পদ্ধতিও। প্রাচীনকালের গুরুগৃহে শিক্ষাপদ্ধতির জায়গা নিয়েছে আধুনিক কোচিং সেন্টার। যুগের পর যুগ পরিবর্তিত হবে, মানুষের চাহিদাতেও বদল আসবে, কিন্তু শিক্ষকের প্রয়োজন (শিক্ষার প্রয়োজন) কখনো ফুরোবে না।

তাই বর্তমানে কোচিং সেন্টার একটি অত্যন্ত সন্মানজনক পেশা। এটি এমন একটি পেশা যা ছাত্রছাত্রীদের সামগ্রিক উন্নয়নে সাহায্য করে। বহু সফল ছাত্রছাত্রী বর্তমানে এই পেশার সাথে নিযুক্ত হয়ে নিজেদের জ্ঞানের আলো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়ে জীবনধারণ করছে।


আমাদের Facebook পেজ লাইক করার অনুরোধ রইল। ↓


কোচিং সেন্টার কি?

কোচিং সেন্টার শব্দটির সাথে বর্তমানে সকলে পরিচিত। বিভিন্ন ধরনের বিদ্যা রপ্ত করতে ছাত্রছাত্রীরা যে স্থানে সমবেত হয়, তা হল কোচিং সেন্টার।

কোচিং শব্দটি এসেছে ‘কোচ’ শব্দটি থেকে। যার বাংলা অর্থ প্রশিক্ষক অর্থাৎ যিনি কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা প্রদান করেন, যাতে তারা সেই নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে।

[বিঃদ্রঃ যে কোনো বিদ্যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দান করাই, কোচিং পেশার অন্তর্গত। তবে আমরা এই আলোচনাটি মূলত পড়াশোনাকেন্দ্রিক করব।]

কেন কোচিং সেন্টার করবেন?

যে কোনো শিক্ষিত পড়াশোনাতে আগ্রহী ব্যক্তি কোচিং পেশাটিকে গ্রহণ করতে পারেন এবং তার জন্য নিজের বাড়ি বা অন্যত্র তা শুরু করতে পারেন। এভাবে বহুদিন ধরে কোচিং পেশা গ্রহণ করে বহু মানুষ জীবিকা অর্জন করেছেন।

বর্তমানে এই একমুখী কোচিং-এর ভাবনার সাথে আর একটি নতুন দিক উঠে আসছে। অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবক-অভিভাবিকরা চাইছেন তাদের সন্তান কোনো একটি স্থানে গিয়ে সকল বিষয় পড়াশোনা করুক অর্থাৎ একই ছাদের তলায় সব বিষয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকা তাদের সন্তানকে শিক্ষা প্রদান করুক; এটা কেবলমাত্র কোচিং সেন্টারের ক্ষেত্রেই সম্ভব।

তাই বর্তমান চাহিদার উপর নির্ভর করে বহু মানুষ কোচিং সেন্টারকে পেশা বানাচ্ছেন। শিক্ষককতার অভিজ্ঞতা যুক্ত কোনো ব্যক্তি বা কিছু মানুষ একটি সংগঠন তৈরি করে সেখানে দক্ষ প্রশিক্ষকদের নিয়োগের মাধ্যমে গড়ে তুলছেন কোচিং সেন্টার বা কোচিং ইনস্টিটিউট।

নার্সারি থেকে শুরু করে চাকরির পরীক্ষা পর্যন্ত সব কিছুই বর্তমানে পড়ানো হয় কোচিং সেন্টারে। ভারতের জনসংখ্যার বিচারে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রচুর, তাই কোচিং সেন্টার একটি লাভজনক ব্যবসা।
careerbondhu.com whatsapp channel
এবার আমরা দেখে নেব কোচিং ব্যবসার কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক।

Strength

ব্যবসাটি স্বল্প পুঁজিভিত্তিক। প্রায় বিনাপুঁজিতেই এই ব্যবসা শুরু করা যায়।

Weakness

শিক্ষকের দক্ষতাই এই পেশায় শেষ কথা। বোঝানোর ক্ষমতা এবং পড়ানোর দক্ষতা কম থাকলে, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কমে যাবে।

Opportunity

বর্তমান সময়ে সকল ছাত্রছাত্রী বাড়ি বসে পড়ার থেকে কোচিং সেন্টারে পড়তেই বেশি আগ্রহী। তাই ছোটো ক্লাসের বাচ্চা থেকে শুরু করে চাকরি প্রার্থী সকলেই কোচিং সেন্টারকে বেছে নিচ্ছে পরীক্ষা প্রস্তুতি নিতে।

Threat

ভারতবর্ষে শিক্ষিত বেকারত্বের হার ঊর্ধ্বমুখী। তাই পড়াশোনায় আগ্রহী বহু শিক্ষিত মানুষ এই পেশাটির মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করছেন, তাই প্রতিযোগিতা খুবই বেশি।

একটি ইনস্টিটিউট থেকে শিক্ষকরা প্রতিযোগী ইনস্টিটিউটে যোগদান করে। তাই শিক্ষক ধরে রাখা একটি সমস্যা।

কারা কোচিং সেন্টার বা ইনস্টিটিউট খুলবেন?

শিক্ষিত পুরুষ/মহিলা উভয়ই এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। যারা পড়াশোনা করতে ভালোবাসেন, পড়া বোঝাতে দক্ষ এবং ভবিষ্যতে শিক্ষক বা শিক্ষিকা হতে চান তারা এই ব্যবসা শুরু করতে পারে। একটি কথা মনে রাখবেন, যদি আপনি ভাবেন যে পার্ট টাইমে এই কাজ করবেন সেক্ষেত্রে আপনার সাফল্যলাভের সম্ভাবনা কম।

careerbondhu.com telegram channel

কোচিং সেন্টারের সাফল্যলাভের জন্য কি কি দক্ষতার প্রয়োজন?

কোচিং সেন্টারের সাফল্যলাভের জন্য যে যে দক্ষতা প্রয়োজন, সেগুলি হল –

  • যে বিষয় পড়ানো হয় সেই বিষয়গুলি নিয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।
  • বাচ্চাদের পড়ানোর ক্ষেত্রে মানসিক ধৈর্য এবং শিশু মন বোঝার মানসিকতা থাকা প্রয়োজন।
  • এই ব্যবসার জন্য দৃঢ় মানসিকতা থাকতে হবে। কারণ এই ব্যবসায় প্রতিযোগিতা অনেকটাই বেশি।
  • সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোচিং সেন্টারে যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা আসবে তাদের প্রয়োজন, সুবিধা-অসুবিধা অনুসারে তাদের পাশে থাকাটা একান্ত আবশ্যক।

কিভাবে কোচিং সেন্টার বা কোচিং ইনস্টিটিউট শুরু করবেন?

আমরা দুটি ভাগে এই অংশটি ভাগ করে নেব – ক) কোচিং ব্যবসার ব্যবসায়িক দিক ও খ) কোচিং ব্যবসার প্রশাসনিক দিক।

ক) কোচিং ব্যবসার ব্যবসায়িক দিক

পুঁজি (Capital)

প্রথমেই ভেবে নিন আপনি কত পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারবেন। পুঁজি কিভাবে ভাগ করবেন তার একটা গাইডলাইন আমরা নীচে দিলাম।

  • পড়ানোর সরঞ্জাম (বোর্ড, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি)
  • বই খাতা
  • বাড়িভাড়া
  • অন্যান্য শিক্ষকের বেতন
  • মার্কেটিং খরচ

মনে রাখবেন, আপনি কিন্তু প্রথম দিন থেকেই ছাত্র-ছাত্রী নাও পেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে কিছুদিন ব্যবসা চালানোর জন্য পুঁজি নিয়েই ব্যবসায় নামতে হবে।


আরো পড়ুন – শাড়ির ব্যবসা সম্পর্কে

নাম নির্ধারণ (Brand Name)

এবার ব্যবসার একটি নাম নির্বাচন করুন। আপনি যে ধরণের কোচিং করাবেন, আপনার নামকরণ সেইভাবেই হওয়া উচিৎ। আপনি কি ধরণের কোচিং করাবেন তা যেন অবশ্যই আপনার লোগোর মধ্যেই থাকে। আপনি যদি সরকারী চাকরীর কোচিং করানোর জন্য ব্যবসা খোলেন, সেক্ষেত্রে লোগোর নীচে লিখুন, সরকারী চাকরীর প্রস্তুতি। আবার জন্য আপনি নবম থেকে দশম শ্রেণির জন্য পড়ান সেক্ষেত্রে কোন বোর্ডের কোন কোন শ্রেণির জন্য পড়াচ্ছেন তা উল্লেখ করুন।

যদি আপনি আপনার ব্যবসা বড় করে তুলতে চান সেক্ষেত্রে যে নামটি আপনি নির্বাচন করছেন তা মিলিয়ে একটি domain কিনে রাখতে পারেন। এটা ভবিষ্যতে আপনাকে সাহায্য করবে।

স্থান নির্বাচন (Place)

এবার আপনি কোথায় আপনার ব্যবসা খুলবেন তা গুরুত্বপূর্ণ। কোচিং ইনস্টিটিউট জনবহুল স্থানে খোলার প্রয়োজন নেই। তবে আপনার স্থানটি এমন হওয়া উচিৎ যেখানে ছাত্র – ছাত্রীরা আসতে সচ্ছন্দ বোধ করবে।

লাইসেন্স (License)

এবার আপনি একটি ট্রেড লাইসেন্স করবেন। হয়তো অনেকেই কোচিং সেন্টার চালান কোনরকম ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া। কিন্তু মনে রাখবেন ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া প্রোপাইটরশিপ ব্যবসার কোন বৈধতা নেই। আপনি কর্পোরেশন, মিউনিসিপ্যালিটি অথবা পঞ্চায়েত যেকোন স্থান থেকেই খুব কম খরচে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে নিতে পারবেন।

ব্যাংক একাউন্ট (Bank Account)

এইবার আপনি একটি ব্যাংকে কারেন্ট একাউন্ট খুলবেন। অনেকেই সেভিংস একাউন্ট খুলে তাতেই ফিস জমা নেন, এটা কিন্তু আইনি দিক থেকে সঠিক নয়। ফিসের পরিমাণ বেশি হলে আপনি আয়কর দপ্তরের নজরে পড়ে যেতে পারেন। তাই অবশ্যই আপনি কারেন্ট একাউন্ট খুলে নিন।

মার্কেটিং (Marketing)

মনে রাখবেন হঠাৎ করে এই ব্যবসায় সাফল্য পাওয়া যায় না। ক্রমাগত কাজের মধ্যমে সুনাম অর্জনের সাথে সাথে ব্যবসা বৃদ্ধি হয়। কিন্তু আপনার ব্যবসার নাম যদি সবাই জানতে না পারে, তাহলে আপনার কাছে তারা আসবে কিভবে? তাই এই ব্যাবসায় মার্কেটিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কয়েকটি পদ্ধতিতে আপনি আপনয়ার কোচিং সেন্টারের মার্কেটিং করতে পারেন।

  • Google Business – সর্বপ্রথমে আপনার কোচিং সেন্টার Google এ লিপিবদ্ধ করুন। এতে লোকাল ছাত্র – ছাত্রীরা আপনার কোচিং সেন্টার সহজে খুঁজে পাবে।
  • ব্যানার প্রিন্টিং – কিছু ব্যানার প্রিন্ট করে স্থানীয় জনপ্রিয় কিছু জায়গায় লাগান, যাতে ছাত্র ছাত্রীরা আপনার কোচিং সেন্টার সম্পর্কে জানতে পারেন।
  • লিফলেট প্রিন্টিং – লিফলেটের মাধ্যমে আপনার আপনার কোচিং সেন্টারের মূল বক্তব্য প্রচার করুন।
  • Social Media – কিছু ডিজিটাল ব্যানার তৈরি করে Facebook পেজ এবং নিজের WhatsApp এর মাধ্যমে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিন।

careerbondhu.com whatsapp channel

খ) কোচিং ব্যবসার প্রশাসনিক দিক

শিক্ষক নির্বাচন (Teacher Selection)

আপনি নিশ্চয় ঠিক করে ফেলেছেন যে আপনি কি বিষয়ের কোচিং করবেন। যদি আপনি একক দক্ষতার উপর ভিত্তি করে কোচিং করানোর কথা ভাবেন, সেক্ষেত্রে এই পয়েন্টটি আপনার জন্য নয়। কিন্তু আপনি যদি একাধিক শিক্ষক নিয়োগ করার কথা ভাবেন। সেক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে।

– আপনি কি কি বিষয়ের জন্য শিক্ষক নিয়োগ করবেন?

– শিক্ষকরা কতক্ষণ আপানার ইন্সটিটিউটে পড়াবেন?

– আপনি শিক্ষকদের কত টাকা বেতন দেবেন?

মনে রাখবেন, আপনি কেমন পড়াচ্ছেন, তার উপরই এই ব্যবসার সাফল্য নির্ভর করছে।


আরো পড়ুন – চা ব্যবসা সম্পর্কে

পড়ানোর সিলেবাস (Academic Calender)

আপনি যা যা বিষয় পড়াবার কথা ভাবছেন তা সিলেবাস অনুযায়ী সময়ের সাথে ভাগ করে নিন এবং সেই সময় অনুযায়ী ক্লাস করান।

উদাহরণ হিসাবে ধরা যাক, আপনি দশম শ্রেণির ভৌতবিজ্ঞান পড়াবেন, এবার আপনি দেখলেন যে 10টি অধ্যায় সিলেবাসে আছে। এবার আপনি শিক্ষাবর্ষ ও আপনার ক্লাসের সময় অনুযায়ী সিলেবাস ভাগ করে প্ল্যান তৈরি করুন এবং ঐ প্ল্যান বজায় রেখে ক্লাস নিন।

আডমিশন (Admission Process)

সম্পূর্ণ আডমিশন পদ্ধতি কিভাবে হবে তা আগে থেকে ভেবে নিন। ভর্তির জন্য ফর্ম তৈরি করুন এবং প্রতিটি ছাত্র / ছাত্রীর সব তথ্য নিজের কাছে রাখুন। মনে রাখবেন, কোন ছাত্র বা ছাত্রী ভর্তি হবার সময় আপনাকে নানারকম প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে, তাই সম্ভাব্য প্রশ্নের উত্তর তৈরি রাখুন।

গার্জেনদের সাথে যোগাযোগ (PTM)

নিয়মিত গার্জেনদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। ছাত্র / ছাত্রীর কেমন উন্নতি হচ্ছে তা নানান পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করুন এবং সেই তথ্য গার্জেনদের জানান।

ফিস ম্যানেজমেন্ট (Fees Management)

ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে নিয়মিত ফিস দেয় তা নিশ্চিত করুন। গার্জেনদের নির্দিষ্ট তারখে ফিস জমা দেবার তারিখ বেঁধে দিন।

আসা করছি আমরা আপনাকে কোচিং ব্যবসা সম্পর্কে একটি ধারণা দিতে পারলাম। ব্যাস আর অপেক্ষা কিসের, আজ থেকেই শুরু করে দিন আপনার নিজের ব্যবসার পরিকল্পনা।

এই প্রবন্ধ থেকে উপকৃত হলে সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।

পর্ব সমাপ্ত! আরো পড়ুন – কেক বেকারি ব্যবসা


নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য ফলো করুন

WhatsApp Channel | Telegram Channel | Facebook Page


careerbondhu-telegram-channel

বিশেষ দ্রষ্টব্য

  • এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer
  • নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error
error: Content is protected !!