Category – Biography
এ.পি.জে আবদুল কালাম (APJ Abdul Kalam) “ভারতের মিশাইল ম্যান (Missile Man of India)” হিসাবে পরিচিত। আমরা সকলেই তাঁর কথা শুনেছি। তিনি ভারতবর্ষের একাদশতম রাষ্ট্রপতি (President) ছিলেন।
কিন্তু এটা কি জানা আছে, যে তিনি এক সময় নিউজপেপার বা সংবাদপত্র বিতরণ করতেন এবং মাত্র 15 বছর বয়সে তাঁকে নিউজপেপার বিতরণ করে সংসার চালাতে হত।
কিভাবে একজন সামান্য নিউজপেপার বিতরণকারী থেকে একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী (Scientist) এবং রাষ্ট্রপতি হলেন, সেই ঘটনাই আজ বলবো তোমাদের।
এ.পি.জে আবদুল কালাম
তাঁর পুরো নাম আভুল পাকির জয়নুলাবেদিন আবদুল কালাম। তিনি ভারতের তামিলনাড়ুর একটি ছোট শহর রামেশ্বরমে, 1931 সালে 15ই অক্টোবর একটি নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
ছোটোবেলায় এ.পি.জে আবদুল কালামকে প্রধান যে সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয়েছিল তা হল দারিদ্র্য। তাঁর বাবা জয়নুলাবদিন ছিলেন একজন নৌকার মালিক এবং তাঁর মা আশিয়াম্মা একজন সাধারণ গৃহিণী ছিলেন।
আবদুল কালাম ছিলেন একজন পরিশ্রমী এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছাত্র। শেখার প্রতি তাঁর গভীর আবেগ এবং চারপাশের জগৎ সম্পর্কে কৌতূহল তাঁকে শিশুকাল থেকেই সবার মাঝে আলাদা করে তুলে ছিল। তাঁর এই বিরল প্রতিভার জন্য তিনি শিশু বয়স থেকেই স্কলারশিপ (Scholarship) পেতেন।
কিন্তু জীবন তাঁর এত সহজভাবে এগোয়নি। মাত্র 15 বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান। তাঁর বাবার এই আকস্মিক মৃত্যু, তাঁদের পরিবারকে একটি কঠিন আর্থিক পরিস্থিতির সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। তাঁকে কিশোর বয়স থেকেই জীবনের কঠিন লড়াই সামলাতে হয়েছিল। পরিবার এবং নিজের পড়াশোনার তাগিদে তাই প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি সংবাদপত্র বিতরণ করতেন এ.পি.জে আবদুল কালাম।
এই ভয়ঙ্কর কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি কখনোই তাঁর স্বপ্ন ছেড়ে দেননি, তাঁর অসীম ইচ্ছাশক্তির হাত ধরে তিনি চালিয়ে গেছেন তাঁর পড়াশোনা। এই ভাবেই 1954 সালে তিনি পদার্থবিদ্যায় সেন্ট জোসেফস কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
শুরু হল তাঁর জয়যাত্রা!
এরপর তিনি 1960 সালে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে বিমানপ্রযুক্তি অর্থাৎ অ্যারোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ডিগ্রি অর্জন করেন। কলেজের শুরুর জীবন থেকে একাধিক সংগ্রাম তাঁর চারিত্রিক দৃঢ়তা এবং কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি সহজেই কাটিয়ে উঠেছিলেন। অ্যারোনটিক্স এবং স্পেস সায়েন্সের প্রতি তাঁর এই ব্যাপক আগ্রহ পরবর্তীকালে তাঁকে ভারত তথা গোটা বিশ্বের একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল।
এ.পি.জে আবদুল কালামের কর্মজীবন
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনে (DRDO) বিজ্ঞানী হিসেবে এ.পি.জে আবদুল কালাম তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ভারতের প্রতিরক্ষা (Defense) এবং মিশাইল প্রোগ্রামে এ.পি.জে আবদুল কালামের অবদান চিরস্মরণীয়। তাঁর কর্মজীবনের অন্যতম সেরা কাজ অগ্নি (Agni) এবং পৃথ্বী (Prithvi) (ব্যালিস্টিক মিশাইল) এর উদ্ভাবন।
অসংখ্য প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও, তিনি কঠিন পরিশ্রম এবং উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির মাধ্যমে ভারতের মিশাইল টেকনোলজির উন্নতি করেছিলেন।
এ.পি.জে আবদুল কালামের নিষ্ঠা এবং প্রতিভা তৎকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তাই 1992 সালে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা (Chief Scientific Advisor) হিসাবে নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রপতি এ.পি.জে আবদুল কালাম
2002 সালে ভারতের একাদশতম রাষ্ট্রপতি হিসাবে নিযুক্ত হন এ.পি.জে আবদুল কালাম। 2002 থেকে 2007 সাল পর্যন্ত অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন, তিনি শিক্ষা প্রচারের দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন, বিশেষত ভারতবর্ষের পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলির উন্নয়নে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর প্রচেষ্টা করেছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, “একমাত্র শিক্ষাই ব্যক্তির ক্ষমতায়ন এবং সামগ্রিকভাবে জাতিকে উন্নত করার চাবিকাঠি।”
রাষ্ট্রপতির কার্যকাল শেষ হবার পর তিনি বিভিন্ন ইনস্টিটিউট এবং কলেজে অধ্যাপক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি প্রায়শই স্কুল এবং কলেজে বক্তব্য রাখতেন, তরুণ মনকে তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করতে এবং সমাজে অবদান রাখতে অনুপ্রাণিত করতেন।
এ.পি.জে আবদুল কালাম-এর মৃত্যু
2015 খ্রিষ্টাব্দের 27শে জুলাই, মেঘালয়ের শিলং শহরে অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টে “বসবাসযোগ্য পৃথিবী” বিষয়ে বক্তব্য রাখার সময় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে এই মহান নক্ষত্রের পতন ঘটে।
এই মহান কর্মপ্রিয় মানুষটির ইচ্ছা অনুযায়ী বিধাতাও যেন, কর্মের মধ্যেই (বক্তৃতা চলাকালীন) তাঁকে বিলীন করে দিলেন।
“Dream is not that which you see while sleeping,
it is something that does not let you sleep.”
পর্ব সমাপ্ত!
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer।
- নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error।