Category – Business
বাড়ি থেকে কেক বানিয়ে তা নিয়ে ব্যবসা করার ভাবছেন? কিন্তু বুঝতে পারছেন না যে, কিভাবে কেকের ব্যবসা শুরু করবেন? তাহলে আপনি সঠিক পেজে এসেছেন, এই প্রবন্ধে আমরা কেক ব্যবসার সমস্ত খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা করবো।
Table of Contents
কেকের জনপ্রিয়তা
পৃথিবীতে বিভিন্ন দেশের মধ্যে ভারতবর্ষ এবং তার মধ্যে বিশেষ করে বাঙালীরা ভীষণরকম খাদ্যরসিক। দুশো বছরের ব্রিটিশ শাসন ভারতবর্ষকে একদিকে যেমন ব্যাপকভাবে শোষণ করেছে, অন্যদিকে তাদের সংস্কৃতি, ভাষা, শিক্ষা, পোশাক পরিচ্ছদ এবং খাওয়া দাওয়ার রীতিনীতিও আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করেছে।
বিদেশী খাবারের মধ্যে কেক ভারতীয়দের মধ্যে ব্রিটিশ আমলেই মূলত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। মিষ্টি প্রিয় ভারতীয় তথা বাঙালীরা তাদের নিজস্ব বহু মিষ্টির সাথে এই বিদেশী মিষ্টি খাদ্যকে স্বাদরে গ্রহণ করেছে। সময়ের সাথে সাথে বাঙালীর নিজস্বতা মিশে কেক হয়ে উঠেছে অত্যন্ত লোভনীয় এবং জনপ্রিয় একটি খাদ্য।
তাই বর্তমানে কেক-বেকারি ব্যবসা অত্যন্ত লাভজনক ও জনপ্রিয় একটি পেশা।
কেক বেকারি ব্যবসা কি?
এক কথায় বলতে গেলে, কেক তৈরি করে তা গ্রাহকদের বিক্রয় করাই হল কেক বেকারি ব্যবসা।
এই ব্যবসায় মূলত তিনটি ধাপ রয়েছে –
• বিভিন্ন ধরনের কেক প্রস্তুত করা।
• যথাযথভাবে তাদের প্যাকিং করা।
• কাস্টমারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া এবং তাদের থেকে অর্থ নেওয়া।
আমরা এই প্রবন্ধে মূলত যারা বাড়ি থেকে কেক ব্যবসা করবেন, তাদের কথাই আলোচনা করবো।
কেন কেক বেকারি ব্যবসা করবেন?
বর্তমান যুগে মানুষ খুব হুজুগ প্রিয়। ছোটো থেকে বড় যে কোনো অনুষ্ঠানেই এখন সৃজনশীলভাবে মানুষ সেইসব অনুষ্ঠান সেলিব্রেট করে। আর এই সেলিব্রেশনের একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে কেক কাটা। আগে প্রধানত জন্মদিনেই বাতি নিভিয়ে কেক কেটে পালন করা হত।
তবে বর্তমানে যে কোনো আনন্দ অনুষ্ঠানেই কেকের ব্যবহার দারুণ জনপ্রিয় যেমন – টিচারস ডে, অ্যানিভার্সারি, বিয়ে, সাক্সেস পার্টি (Success Party) ইত্যাদি সবক্ষেত্রেই কেক কাটা একটি রীতি হয়ে উঠেছে।
শুধু তাই নয় সকালের ব্রেকফাস্ট থেকে বিকেলের স্ন্যাক্স হিসাবে ছোটো বড় সকলের কাছেই একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবার হল এই কেক। তাই কেকের চাহিদা বাজারে বেশ বেশি। সুতরাং কেক যে একটি লাভজনক ব্যবসা সেই বিষয়ে নিঃসন্দেহ এবং ব্যবসাটি খুবই স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা যায়।
Strength
আরো পড়ুন – হোম কিচেন ব্যবসা সম্পর্কে
• ব্যবসাটি স্বল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় এবং Customized কেকের চাহিদা বাজারে যথেষ্ট।
• গ্রাহকরা নতুন ধরণের কেক ট্রায়াল দিতে পছন্দ করেন, সুতরাং নতুন গ্রাহক তৈরি করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
Weakness
• কেক এমন একটি খাদ্য দ্রব্য, যা দ্রুত পচনশীল তাই এই ব্যবসায় অনেক সময় কেক নষ্ট (damage and wastage) হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
Opportunity
• বিশ্বায়নের যুগে এই ধরনের খাদ্য দ্রব্যের চাহিদা খুবই বেশি। গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই মানুষ ক্ষুধা নিবারণের জন্য বা আনন্দ উৎসব পালন করতে কেক ব্যবহার করেন।
Threat
• প্রতিযোগিতা মূলকবাজার; বর্তমানে শহর ও শহরতলী এলাকায় সর্বত্রই ব্র্যান্ডেড কেকের দোকান পাওয়া যায় তাই এই ব্যবসায় প্রতিযোগিতা যথেষ্ট বেশি।
কারা করবেন কেক বেকারি ব্যবসা?
বিভিন্ন বয়সী পুরুষ ও মহিলা যারা স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করতে চান, যাদের কেক বানানোর প্রতি আগ্রহ আছে এবং বিভিন্ন ধরনের কেক বানাতে পছন্দ করেন তারাই এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।
কেক বেকারি ব্যবসায় সাফল্যলাভের জন্য কি কি দক্ষতার প্রয়োজন?
এই কেক বেকারি ব্যবসায় সাফল্যের জন্য নিম্নলিখিত দক্ষতাগুলি থাকা প্রয়োজন –
• সৌন্দর্যবোধ – এই পেশায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নান্দনিক দৃষ্টিভঙ্গি। বর্তমানে ইন্টারনেটে বিভিন্ন ডিজাইনের সম্ভার দেখা যায়। তার উপর ভিত্তি করে নিজস্ব সৌন্দর্যবোধকে কাজে লাগিয়ে কেক প্রস্তুত করা প্রয়োজন।
• কেক তৈরির সরঞ্জাম – বর্তমানে কেক প্রস্তুতি অনেকটাই প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে উঠেছে। কেক প্রস্তুতির জন্য যে সমস্ত যন্ত্রপাতি রয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
তবে এই বিষয়েও আপনার সহায়ক হয়ে উঠতে পারে ইন্টারনেট। একদিকে যেমন YouTube-এর ভিডিও দেখে আপনি নতুন যন্ত্রের ব্যবহার বা পদ্ধতি শিখে নিতে পারবেন তেমনই অনলাইন মার্কেট থেকে আপনার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কম দামে কিনে নিতে পারবেন।
• কথা বলার দক্ষতা – যে কোনো ব্যবসায় গ্রাহকের চাহিদা বোঝা এবং নিজস্ব দ্রব্যের বিষয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে গ্রাহকের প্রয়োজন মেটানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ব্যবসার উন্নতি দ্রব্যমানের থেকেও বেশি নির্ভর করে ব্যবসায়ীর ব্যবহার ও ধৈর্য্যের উপর। তাই গ্রাহকের সাথে কথা বলার সময়ে ব্যবসায়ীর পেশাদারীত্ব থাকা আবশ্যক।
আরো পড়ুন – শাড়ির ব্যবসা সম্পর্কে
কিভাবে করবেন কেক বেকারি ব্যবসা?
পুঁজি (Capital)
ব্যবসার প্রথমিক উপাদান হল পুঁজি। ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে ভেবে নিতে হবে যে আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করতে পারবেন। কত টাকার প্রয়োজন হতে পারে এটা বুঝতে গেলে আপনাকে সম্ভাব্য খরচের একটা বাজেট তৈরি করে ফেলতে হবে। যেমন –
• যন্ত্রপাতির খরচ [যেমন মিক্সার, ওভেন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন ইত্যাদি]
• কাঁচামালের খরচ [যেমন ময়দা, চিনি, বাটার, চকোলেট ইত্যাদি]
• প্যাকেজিং-এর খরচ [যেমন বাক্স, আল্যুমিনিয়াম ফয়েল ইত্যাদি ]
• বিজ্ঞাপণের খরচ ইত্যাদি
• ব্যবসা চলানোর খরচ [যেমন বিদ্যুতের বিল, লাইসেন্সের খরচ ইত্যাদি]
এই খরচগুলির সাথে আপনার প্রয়োজন মিলিয়ে একটা বাজেট তৈরি করে নিন। তবে মানে রাখবেন বাজেট তৈরি করার সময় কিছু অতিরিক্ত অর্থ রাখবেন কারণ হিসাব সর্বদা আপনার অনুকূলে নাও থাকতে পারে।
আরো পড়ুন – চা ব্যবসা সম্পর্কে
যদি আপনার বাড়িতে কোনো যন্ত্র থেকে থাকে যা আপনি ব্যবসার কাজে ব্যবহার করবেন, সেক্ষেত্রে আপানর পুঁজি কম লাগবে হবে। আমাদের মতে কেকের ব্যবসা শুরু করতে গেলে ন্যূনতম 10,000 – 20,000 টাকার প্রয়োজন।
ব্যবসার নামকরণ (Brand Name)
পুঁজি নির্ধারণ করার পর আপনি ব্যবসার নামকরণ করে নিন। যেহেতু আপনি এই ব্যবসাটি করবেন এবং আপনাকে চিনেই এই ব্যবসার গ্রাহকরা আসবেন তাই আমাদের মতে আপনার নামের সাথে সমঞ্জস্য রেখেই ব্যবসার নাম ঠিক করুন।
ফুড লাইসেন্স (fssai licence)
মনে রাখবেন ভারতবর্ষে যে কোনো ধরনের খাবার ব্যবসার জন্য ফুড লাইসেন্স অত্যন্ত জরুরী। বর্তমানে অনলাইনেই আপনি ফুড লাইসেন্স তৈরি করিয়ে নিতে পারেন। শুধু তাই নয়, অনলাইন কোনো মাধ্যমে বিক্রি করার জন্য আপনার ফুড লাইসেন্স একান্ত জরুরী।
আমাদের Facebook পেজ লাইক করার অনুরোধ রইল। ↓
দাম নির্ধারণ (Pricing) –
কেকের দাম কিভাবে নির্ধারণ করবেন, এটা জানতে হলে আপনাকে কেক প্রতি খরচের একটা হিসাব করতে হবে। আমরা নীচে একটি সহজ হিসাব দিলাম।
35% কাঁচামাল
20% লেবার চার্জ
10% গ্যাস ও ইলেকট্রিক খরচ
20% প্যাকিং মেটেরিয়াল
5% ডেলিভারি চার্জ
10% লাভ
ধরা যাক, আপনি একটি কেকের দাম 100 টাকা রাখতে চাইছেন। উপরের ফর্মুলা মেনে, সেক্ষেত্রে আপনার ঐ কেকের জন্য কাঁচামাল খরচ হওয়া উচিৎ 35 টাকার মধ্যে, লেবার চার্জ 20 টাকার মধ্যে, গ্যাস ও ইলেকট্রিক খরচ 10 টাকার মধ্যে, প্যাকিং চার্জ হওয়া উচিৎ 20 টাকার মধ্যে, ডেলিভারি হওয়া উচিৎ 5 টাকার মধ্যে এবং আপনার লাভ হওয়া উচিৎ 10 টাকার মধ্যে।
তবে পরিমাণ অনুযায়ী এই ফর্মুলা পরিবর্তিত হওয়া উচিৎ।
প্যাকেজিং (Packaging)
কেক যেহেতু একটি নরম খাবার তাই এই প্যাকেজিং খুব ভালো হওয়া দরকার। আপনি বাজারে বিভিন্ন দামে কাগজের বক্স, প্লাস্টিক ফয়েল, আল্যুমিনিয়াম ফয়েল ইত্যাদি পাবেন। মনে রাখবেন, আপনয়ার কেকের সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করবে আপনার ব্যবসার ভবিষ্যৎ। তাই প্যাকেজিং-এর বিষয়ে বিশেষ যত্ন নেওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়।
বিপনন (Marketing)
কেকের ব্যবসার প্রচার করবেন কিভাবে? চলুন আমরা এখানে কয়েকটা উপায় দেখে নিই –
ক্যাটালগ তৈরি করা – সবার প্রথমে যে কাজটি করুন তা হল আপনি যে কেকগুলি বিক্রি করতে চলেছেন তাদের ছবি, দাম ও পরিমাণ সহ একটি ক্যাটালগ তৈরি করুন। এই ক্যাটালগ কয়েকটা কালার প্রিন্ট করিয়ে রাখুন এবং ঐ ডিজিটাল ক্যাটালগ আপনার ফোনে সেভ করে রাখুন। যাতে কোনো গ্রাহক জানতে চাইলেই আপনি সময় নষ্ট না করে ক্যাটালগ শেয়ার করতে পারেন।
আরো পড়ুন – কোচিং সেন্টার ব্যবসা সম্পর্কে
পরিচিত মানুষদের বলা – অধিকাংশ ব্যবসায় প্রথম গ্রাহক আসে পরিচিত মানুষদের মধ্যে থেকেই। আপনার ক্ষেত্রেই বা তার ব্যতিক্রম হবে কেন? তাই ক্যাটালগ তৈরি হয়ে গেলেই, একটুও দেরি না করে নিজের পরিবার, বন্ধু ও পরিচিত মানুষদের সাথে শেয়ার করুন।
ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হওয়া – আপনি যে জায়গায় বিক্রি করতে চলেছেন, সেখানকার লোকাল ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে নিজের ব্যবসার কথা সবাইকে জানান।
সোশ্যাল মিডিয়া প্রচার করা – সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ব্যবসার পেজ খুলে নিন এবং সেই পেজে নিজের তৈরি করা কেকের ছবি প্রচার করুন।
হিসাব রাখা (Accounting) – ব্যবসার হিসাব একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, তাই সব খরচের হিসাব রাখুন এবং প্রতিটি বিক্রির হিসাব রাখুন।
যোগাযোগ (After Sales service) – কেকের ব্যবসা যেহেতু ব্যক্তিগত ব্যবসা তাই প্রতিটি গ্রাহকের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি বিক্রয়ের পর গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করুন, কেক সম্পর্কে তাদের মতামত নিন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের শুভেচ্ছা জানান। অর্থাৎ, তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। জানবেন, 1 জন সন্তুষ্ট গ্রাহক আপনাকে আরো 10 জন গ্রাহকের সন্ধান দিতে পারেন।
পর্ব সমাপ্ত!
নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য ফলো করুন ↓
WhatsApp Channel | Telegram Channel | Facebook Page
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer।
- নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error।