Dhirubhai-Ambani
Category – Biography

ভারতবর্ষ তথা এশিয়ার অন্যতম একজন ধনী ব্যক্তি হলেন, মুকেশ আম্বানি। মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গোষ্ঠীর কথা আমরা সবাই জানি। রিলায়েন্স গোষ্ঠীর প্রাণপুরুষ হলেন মুকেশ আম্বানির পিতা ধিরুভাই আম্বানি।

কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ভারতবর্ষের সর্ববৃহৎ ব্যবসায়িক সংস্থা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ধীরুভাই আম্বানি। তিনি মাসে মাত্র 300 টাকার মাইনের চাকরি থেকে জীবন শুরু করেছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে নিজের ব্যবসার মাধ্যমে 60 বিলিয়ন সম্পদের মালিক হয়ে উঠেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতবর্ষের অন্যতম ধনী ব্যক্তি।

Ambani on an Indian postal stamp
ভারতীয় পোস্টাল স্ট্যাম্পে ধীরুভাই আম্বানি

ধীরুভাই আম্বানির এই সংক্ষিপ্ত জীবনীতে আমরা তাঁর অসামান্য সাফল্যের কাহিনী ফিরে দেখবো। তাহলে শুরু করা যাক আজকের আলোচনা।

ধীরুভাই আম্বানির জন্ম এবং পরিবার

ধীরুভাই আম্বানির পুরো নাম ধীরাজলাল হীরাচন্দ অম্বানি (Dhirajlal Hirachand Ambani)। তিনি 1932 সালে 28শে ডিসেম্বর গুজরাটের একটি ছোটো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

তাঁর মা একজন গৃহিণী ছিলেন এবং পিতা ছিলেন একজন সাধারণ স্কুল শিক্ষক। দরিদ্র্য পরিবারে তিনি বড় হয়ে উঠেছেন এবং প্রচন্ড কষ্টের সাথে তিনি জীবনের প্রথম দিনগুলি কাটিয়েছেন।

ধীরুভাই আম্বানির শিক্ষাজীবন

ধীরুভাই আম্বানি পড়াশোনাকে গুরুত্ব দেননি, তিনি মাত্র দশম শ্রেণি অবধি পড়াশোনা করেছেন। তাঁর পিতা যথেষ্ট শিক্ষিত হয়েও একজন সাধারণ স্কুলের শিক্ষক ছিলেন এবং তাঁদের পরিবারে আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য ছিলনা। অন্যদিকে তিনি ছোটবেলায় অনেক এমন মানুষকেও দেখেছিলেন, যারা তাঁর পিতার থেকে শিক্ষাগত যোগ্যতায় কম ছিলেন কিন্তু আর্থিকদিক দিয়ে তাঁর পিতার থেকে অনেকতাই এগিয়েছিলেন।

তাই ছোটোবেলা থেকে তিনি মনে করতেন যে পড়াশোনার সাথে বড়লোক হওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই, অর্থাৎ অর্থ উপার্জনের পড়াশোনা বেশি করার প্রয়োজন নেই।

ধীরুভাই আম্বানির কর্মজীবন

তিনি পরিবারের আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য ছোটোবেলা থেকেই কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন মেলায় খাবার বিক্রি করেছেন। পড়াশোনার থেকে টাকা রোজগারের দিকে তাঁর বেশি উৎসাহ ছিল। তাই তিনি দশম শ্রেণির পর আর পড়াশোনা করবেন না বলে সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর তিনি কাজের সন্ধান করেছিলেন কিন্তু কোথাও কাজ খুঁজে না পেয়ে তাকে হতাশ হতে হয়। এইসময়ে তাঁর এক দূরসম্পর্কের দাদা ইয়েমেনে থাকতেন, এই দাদা তাঁকে সেখানে এসে কাজ করার কথা বলেন। মাত্র 16 বছর বয়সে ধীরুভাই আম্বানি কাজের সূত্রে ভারতবর্ষ ছেড়ে ইয়েমেন (Yemen)-এ চলে যান।

ইয়েমেনে গিয়ে তিনি একটি পেট্রোল পাম্পে কাজ করতেন, সেখানে তিনি মাসে মাত্র 300 টাকা বেতন পেতেন। তাঁর কাজ ছিল গাড়িতে পেট্রোল ভরে দেওয়া এবং টাকা নেওয়া। এরই সাথে সাথে তিনি পেট্রোল বা তেলের ব্যবসা সম্পর্কে বোঝার চেষ্টা করছিলেন। কাজের প্রতি বিপুল উৎসাহ তাঁকে ম্যানেজমেন্টের নজরে আনে এবং শীঘ্রই তিনি সেলস ম্যানেজার পদে প্রমোশন পান এবং তাঁর মাইনে বেড়ে 1100 টাকা হয়। কিন্তু তিনি অন্যের অধীনে কাজ করে খুশি ছিলেন না, তাঁর ইচ্ছা ছিল তিনি নিজে কিছু করবেন অর্থাৎ নিজের ব্যবসা শুরু করবেন।

ধীরুভাই আম্বানি মনে করতেন “যদি নিজের স্বপ্ন পূরণের কাজ শুরু না করো, তাহলে অন্য কেউ নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য তোমাকে দিয়ে কাজ করাবে।”

তাই তিনি ইয়েমেনে দুবছর কঠোর পরিশ্রম করে টাকা জমিয়ে ভারতবর্ষে চলে আসেন এবং নিজের স্বপ্ন পূরণের কাজ শুরু করেন। তিনি ভারতে এসে বিভিন্ন ব্যবসা করার কথা ভাবতে শুরু করেন এবং ব্যবসা শুরু করার জন্য অর্থের আশায় বহু ব্যাঙ্কের সাথে যোগাযোগ করেন। কিন্তু কোনো ব্যাঙ্ক তাকে লোন দেওয়ার জন্য রাজি হয়নি। শেষে তিনি মাত্র 500 টাকা নিয়ে বম্বে (মুম্বাই) শহরে আসেন। এখান থেকে শুরু হয় তাঁর ব্যবসা শুরু করার গল্প শুরু হয়।

ধীরুভাই আম্বানির প্রথম ব্যবসা

ধীরুভাই এবং তাঁর দূরসম্পর্কের এক ভাই চম্পকলাল দুজনেই বিদেশে অর্থাৎ ইয়েমেনে একসঙ্গে কাজ করতেন। ভারতবর্ষে এসে দুজনে মিলে ব্যবসা করার চিন্তাভাবনা করেন এবং মিলিতভাবে একটি ব্যবসা শুরু করেন। তারা ভারতের মশলা ইয়েমেনে রপ্তানি করতেন এবং বিনিময়ে ইয়েমেন থেকে পলিস্টার কাপড়ের সুতো আমদানি করতেন এরপর সেই পলিস্টার সুতো দিয়ে জামা-কাপড় তৈরি করে বিক্রি করাই ছিল তাঁদের ব্যবসা।

 

dhirubhai-ambani
পলিস্টারের তৈরি কাপড়

যে কোনো ব্যবসা করার জন্যই একটি কোম্পানির নাম থাকা দরকার। আর তাঁদের কোম্পানির নাম ছিল “মাজিন (Majin)”. সেই সময় অন্য কেউ তাদের ব্যবসাতে সাহায্য করেনি। তাঁরা দুজনই একটি ছোটো অফিস খোলেন, যেখানে তিনটি চেয়ার, একটি টেবিল ও একটি টেলিফোন ছিল।

তাঁদের তৈরি পলিস্টারের তৈরি জামা-কাপড় বিপুল পরিমাণে বিক্রি হতে শুরু করল। ধীরে ধীরে মাজিন কোম্পানির আয় বছরে প্রায় 70 কোটি বা তার বেশি হয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু চম্পকলাল এবং ধীরুভাই দুজনের মধ্যে ব্যবসা নিয়ে মতবিরোধ হওয়ায় দুজনে আলাদা হয়ে যান এবং মাজিন কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়।

রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা

একটি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিন্তু ধীরুভাই থেমে যাননি। তিনি আগের ব্যবসার অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজে একাই একটি টেক্সটাইলের ব্যবসা শুরু করেন, যার নাম দেন রিলায়েন্স টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড (Reliance Textile Industries LTD). ভারতের বৃহত্তম কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির শুরু এভাবেই হয়েছিল।

Reliance Textile Industries LTD
রিলায়েন্স টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড (Reliance Textile Industries LTD)

টেক্সটাইল ব্যবসার পাশাপাশি সেই সময়ে স্টক মার্কেট সম্পর্কেও তাঁর ধারণা পরিষ্কার ছিল এবং স্টক মার্কেটে লগ্নী করা শুরু করেন। তিনি দশম শ্রেণি পাশ হওয়া সত্ত্বেও তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনেক শিক্ষিত মানুষের থেকে এগিয়ে যেতেন। তিনি স্টক মার্কেটে কোন কোম্পানির লাভ হবে তা বুঝে যেতেন। ফলে সস্তায় শেয়ার কিনে তা বেশি দামে বিক্রি করে তিনি অনেক টাকা আয় করেছিলেন। তিনি স্টক মার্কেট এতোটাই ভালোভাবে বুঝতেন, যে তাঁকে “স্টক মার্কেটের জিনিয়াস” বলা হত।

তিনি রিলায়েন্স কোম্পানির জন্য প্রচুর প্রচার করেন, টিভি, রেডিও, খবর কাগজ সর্বত্রই তাঁর কোম্পানির বিজ্ঞাপন থাকতো। তাই প্রত্যেক মানুষ রিলায়েন্স টেকস্টাইল ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে পরিচিত ছিলেন। ভারতের অন্য কোনো কোম্পানি সেই সময়ে এত পরিমাণ মার্কেটিং করতো না।

রিলায়েন্স কোম্পানির প্রচুর পরিমাণে পরিচিত পাওয়ায়, 1977 সালে যখন তিনি রিলায়েন্স কোম্পানির প্রথম শেয়ার স্টক মার্কেটে এল, তখন প্রচুর মানুষ সেই শেয়ার কিনে নেন, একদম প্রথম থেকেই রিলায়েন্সের প্রায় 50 হাজার বিনিয়োগকারী হয়। যার ফলে রিলায়েন্স কোম্পানি ভারতের একটি সেরা কোম্পানি হয়ে যায়।

ধীরুভাই আম্বানি টেক্সটাইলের ব্যবসার পাশাপাশি আরো অনেক ধরণের ব্যবসা শুরু করেন, যেমন – পেট্রোকেমিক্যাল পরিশোধন, তেল ও গ্যাস আমদানি, টেলিকমিউনিকেশন ইত্যাদি। অনেকগুলি ব্যবসা একত্রে শুরু হয় ফলে কোম্পানির নাম পরিবর্তিত হয়ে হয় রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড (Reliance Industries Limited)।

ধীরুভাই আম্বানির মৃত্যু

1986 সালে ধীরুভাই আম্বানির প্রথমবার স্ট্রোক হয়। যার ফলে তাঁর ডান হাতটি প্যারালাইজড হয়ে যায়। কিন্তু তিনি তাঁর ব্যবসা ছাড়েননি। তিনি বলেছিলেন যে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কাজ করে যাবেন। 2002 সালে তাঁর দ্বিতীয়বার স্ট্রোক হয় এবং এর ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়।

 

dhirubhai ambani
ভারতের অন্যতম ধনী ব্যক্তি ধীরুভাই আম্বানি

ভারতের একটি অখ্যাত গ্রাম ও দরিদ্র পরিবার থেকে আসা, অল্প শিক্ষিত ধীরাজলাল হীরাচাঁদ আম্বানি থেকে একজন শিল্পপতি বা ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট (industrialist) ধীরুভাই আম্বানী হয়ে ওঠার গল্প সকলকেই অনুপ্রাণিত (inspired) করে। ইচ্ছা এবং প্রচেষ্টা থাকলেই সমস্ত প্রতিকুলতাকে জয় করে নিজের স্বপ্নকে আগে নিয়ে যাওয়ার রূপকথার নাম ধিরুভাই আম্বানি।

এই সংক্ষিপ্ত জীবনী ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধু বা পরিচিতদের সাথে শেয়ার করতে ভুলো না। এরকম আরো পোস্টের জন্য নজর রাখো কেরিয়ার বন্ধুর ওয়েবসাইটে, CareerBondhu.com.

পর্ব সমাপ্ত!

careerbondhu-telegram-channel

বিশেষ দ্রষ্টব্য

  • এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer
  • নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error
error: Content is protected !!