Category – Biography
ভারত তথা পৃথিবীর এক অন্যতম ধনী ব্যক্তি হলেন এন. আর. নারায়ণ মূর্তি (N.R. Narayana Murthy)। আমরা তাকে ভারতের অন্যতম সফল কোম্পানি ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠতা হিসাবে চিনি। নারায়ণ মূর্তি তার কঠিন পরিশ্রম এবং অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে মাত্র 10,000 টাকা থেকে শুরু করে 1 লক্ষ কোটির কোম্পানি তৈরি করেছেন।
এসো আজ আমরা নারায়ণ মূর্তির সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে কিছু শেখার চেষ্টা করি।
Table of Contents
পরিবার ও ছেলেবেলা
এন. আর. নারায়ণ মূর্তি 1946 সালের 20ই আগস্ট কর্ণাটকের সিডলাঘট্টা (Sidlaghatta) শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম হয় একটি মধ্যবিত্ত কন্নড় ব্রাহ্মণ পরিবারে, তার পিতার নাম এন. রামা রাও ও মাতার নাম পদ্ভত্থুম্মা মূর্তি।
শিক্ষাজীবন
মেধাবী নারায়ণ মূর্তি তার পড়াশোনা শুরু করেন মাইসোরের (mysore) সারদা বিলাস বয়েস উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুল জীবন শেষ করে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। তিনি 1967 সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (NIE, Mysore) কলেজ থেকে ইলেকট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ব্যাচেলার (BE) ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর 1969 সালে তিনি কানপুরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (IIT, Kanpur) থেকে মাস্টার (M.Tech) ডিগ্রি কোর্স উত্তীর্ণ করেন।
কর্মজীবন
এরপর তিনি আহমেদাবাদের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (IIM) প্রতিষ্ঠানে তার কর্মজীবন শুরু করেন। প্রথমে তিনি ছিলেন রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট। এরপর IIM, Ahmedabad কলেজেই একজন চিফ সিস্টেম প্রোগ্রামার (chief systems programmer) হিসাবে যুক্ত হন। এখানে তোমাদের জানিয়ে রাখি, তিনিই ভারতের প্রথম টাইম শেয়ারিং কম্পিউটার সিস্টেমের উপর কাজ করেন।
মেধাবী নারায়ণ মূর্তি শুধুমাত্র চাকরী করেই সন্তুষ্ট ছিলেন না।
তার মনে নিজের প্রচেষ্টায় কিছু করার ইচ্ছা তাকে সবসময় কুরে কুরে খেত। তাই ঐ বিরাট চাকরি তিনি ছেড়ে দিয়ে সফটরণিক (Softronics) নামে একটি কোম্পানি তৈরি করেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় কোম্পানিটি এক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। শুনলে অবাক হবে তোমরা, এরপর এক থেকে দেড় বছর তার হাতে কোনো কাজ ছিল না। অবশেষে তিনি পুনের একটি কোম্পানি পটনী কম্পিউটার সিস্টেমে জেনারেল ম্যানেজার হিসাবে পুনরায় যুক্ত হন।
আরো পড়ুন – রতন টাটার সফলতার গল্প
একবার ব্যর্থ হওয়ার পরেও নারায়ণ মূর্তির কিন্তু নিজের কিছু করার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি!
তার বাবা চেয়েছিলেন নারায়ণ মূর্তি চাকুরীজীবী হয়েই জীবন কাটিয়ে দিক, কিন্তু যিনি ভবিষ্যতে লক্ষ লক্ষ ভারতবাসীকে চাকরী দেবেন তার কি নিজের চাকুরীজীবী হওয়া মানায়!
ইতিমধ্যে সুধা মূর্তির সঙ্গে নারায়ণ মূর্তির বিবাহ হয়েছে। তার অত্যন্ত মেধাবী স্ত্রী সুধা নিজেও ছিলেন একজন ইঞ্জিনিয়ার, টাটা গ্রুপে কর্মরত ছিলেন।
ইনফোসিস
সুধা মূর্তির জমানো মাত্র 10,000 টাকা নিয়ে 1981 সালে নারায়ণ মূর্তি আরো ছয়জন সফটওয়্যার প্রোফেশনালসদের নিয়ে গড়ে তোলেন “ইনফোসিস (Infosys)” কোম্পানি।
নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে ইনফোসিস ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে। মঝে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে পার্টনাররা তাদের ব্যবসা বন্ধ করার কথা চিন্তা করেন, এমনকি একজন পার্টনার তার শেয়ার বিক্রি করে ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যান। নারায়ণ মূর্তি কোনোক্রমে বাকি পার্টনারদের বুঝিয়ে কোম্পানি বন্ধ করার সিধান্ত থেকে সরিয়ে আনেন।
1991 সাল ভারতবর্ষের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতবর্ষের অর্থনীতিতে শুরু হয় বেসরকারিকরণ, উদারীকরণ ও বিশ্বায়ন। আর এরপর থেকেই ইনফোসিসের ব্যবসা বাড়তে শুরু করে। এরপর বদলে যায় নারায়ণ মূর্তি ও সুধা মূর্তির জীবন।
1999 সালে ইনফোসিস প্রথম ভারতীয় কোম্পানী হিসাবে আমেরিকার ষ্টক মার্কেটে নথিভুক্ত হয়। ভারতের শেয়ার বাজারেও ইনফোসিস কোম্পানি অসম্ভব ভালো ফল করে। 2000 সালে নারায়ণ মূর্তির সম্পত্তির পরিমাণ 1 বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।
নারায়ণ মূর্তির নেতৃত্বে আজ ইনফোসিস ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম IT কোম্পানি। মাত্র 10,000 টাকা টাকা দিয়ে তৈরি হওয়া কোম্পানির আজ মোট সম্পত্তির পরিমাণ 1 লক্ষ কোটি টাকা। মাত্র 6 জন ইঞ্জিনিয়ার নিয়ে তৈরি হওয়া কোম্পনিতে আজ কাজ করেন প্রায় 3.5 লাখ কর্মচারী।
নারায়ণ মূর্তি 1981 সাল থেকে 2002 সাল পর্যন্ত অর্থাৎ 21 বছর ধরে ইনফোসিস কোম্পানির CEO ছিলেন।
2002 সাল থেকে 2011 সাল পর্যন্ত তিনি ইনফোসিস কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করছেন। 2011 সালের আগস্ট মাসে তিনি ইনফোসিস থেকে অবসর নেন। তবে তা মাত্র 2 বছরের জন্য। তিনি 2013 সালের জুলাই মাসে ইনফোসিস কোম্পানির এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান হিসাবে 5 বছরের জন্য নিযুক্ত হন।
সন্মাননা
নারায়ণ মূর্তি তার জীবনে দেশ এবং বিদেশ থেকে প্রচুর সম্মান লাভ করেছেন । তিনি ভারত সরকারের তরফ থেকে 2000 সালে “পদ্মশ্রী (Padma Shri)” এবং 2008 সালে “পদ্মবিভূষণ (Padma Vibhushan)” উপাধি লাভ করেন। ফ্রান্স সরকারের পক্ষ থেকে 2008 সালে তাকে “লিজিয়ন অফ অনার” পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। 2007 সালে তিনি “অর্ডার অফ ব্রিটিশ এম্পায়ার” সম্মানলাভ করেন।
এছাড়া কিছু উল্লেখযোগ্য পুরস্কার হল – 2013 সালে প্রাপ্ত Sayaji Ratna Award, 25 Greatest Global Indian Living Legends, Philanthropist of the Year এবং 2014 সালে প্রাপ্ত CIF Global Indian Award ইত্যাদি।
শেষ কথা
ভারতের তথ্য প্রযুক্তিকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন নারায়ণ মূর্তি। সকল ব্যর্থতাকে কাটিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন কিংবদন্তী সফল ব্যবসায়ী।
তার ইনফোসিসের হাত ধরে ভারতবর্ষ ইনফরমেশন টেকনোলজি শিল্পে বিশ্বে নিজের স্থান তৈরি করেছে। তার গল্প বহু ব্যর্থ মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে, নতুন করে স্বপ্ন দেখবার আলো দিয়েছে।
আশা করি নারায়ণ মূর্তির এই সংক্ষিপ্ত জীবনী থেকে তোমরা নতুন করে অনুপ্রেরণা পেলে। এই লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করো এবং CareerBondhu.com টেলিগ্রাম চ্যানেলটি ফলো করে দিও।
পর্ব সমাপ্ত! আরো পড়ুন – ধীরুভাই আম্বানির কোটিপতি হওয়ার গল্প
নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য ফলো করুন ↓
WhatsApp Channel | Telegram Channel | Facebook Page
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer।
- নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error।