Category – Biography
জ্যাভলিন, প্রায় হলফ করে বলা যায় যে 2021 সালের আগে অধিকাংশ ভারতীয় এই খেলাটির নাম শোনেননি। 2021 সালের অলিম্পকে ভারত, জ্যাভলিন এবং নীরজ চোপড়া এই তিনটি শব্দ যেন একে অপরের সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছিল। এই অখ্যাত খেলা এবং ভারতবাসীর কাছে অখ্যাত একজন খেলোয়ার প্রত্যেকটি ভারতবাসীর নয়নের মণি হয়ে উঠেছিল।
নীরজ চোপড়ার জীবনের উত্থান কিন্তু মোটেও সহজ ছিল না। আজকের এই সংক্ষিপ্ত জীবনীতে আমরা নীরজ চোপড়ার জীবনের কিছু ঘটনা ফিরে দেখার চেষ্টা করবো।
Table of Contents
জন্ম ও ছেলেবেলা
নীরজ চোপড়া 24শে ডিসেম্বর 1997 সালে এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তারা মোট 5 ভাই-বোন ছিলেন, সবার মধ্যে তিনিই ছিলেন সবার বড়।
ভারতবর্ষ ক্রিকেটের দেশ, তাই নীরজ নিজেও ছোটবেলায় ক্রিকেট খেলতেই বেশি পছন্দ করতেন, জ্যাভলিন খেলার সাথে তার পরিচয় হয় অনেক পরে।
ছোটবেলায় তার ওজন বেশি হওয়ার ফলে তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে নানান মজা করতো। তাই মূলত ওজন কমানোর লক্ষ্যে নীরজের বাবা তাকে পানিপথের একটি জিমে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। পানিপথের শিবাজী স্টেডিয়ামে নীরজ কিছু ছেলেদের জ্যাভলিন খেলতে দেখেন, এটাই ছিল তার সাথে জ্যাভলিনের প্রথম পরিচয়; এখান থেকে তার জ্যাভলিনের প্রতি আগ্রহ শুরু হয়েছিল।
জ্যাভলিন ও নীরজ চোপড়া
মাত্র 11 বছর বয়স থেকে জ্যাভলিন খেলতে শুরু করলেন। নীরজ চোপড়া 2010 সালে পানিপথ স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (SAI) কেন্দ্রে খেলা দেখতে এসেছিলেন, সেখানে গাজিয়াবাদের বিখ্যাত জ্যাভলিন থ্রোয়ার অক্ষয় চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। সেদিন নীরজ 40-মিটার জ্যাভলিন থ্রো করেছিলেন এবং কোনোরকম ট্রেনিং ছাড়াই এতো ভালো ড্রাইভ দেখে অক্ষয় চৌধুরী অবাক হয়ে যান। এই অক্ষয় চৌধুরীই ছিলেন নীরজ চোপড়ার প্রথম কোচ।
এর পরেই জেলা জ্যাভলিন চ্যাম্পিয়নশিপে স্থান অধিকার করেন, এরপর থেকেই নীরজ চোপড়ার উত্তরণ শুরু হয়। তিনি জ্যাভলিনেই নিজের ক্যারিয়ার তৈরির কথা গুরুত্ব সহকারে ভাবতে শুরু করেন; পড়াশোনার পাশাপাশি চলতে থাকে জ্যাভ্লিনের ট্রেনিং। এরপর একে একে তিনি সাফল্য পেতে শুরু করেন –
- 2012 সালে তিনি ‘ন্যাশনাল জুনিয়র জ্যাভিলিয়ন থ্রো’ প্রতিযোগিতায় প্রথমবার স্বর্ণ পদক (Gold Medal) জিতেছিলেন।
- এরপর 2013 সালে তিনি ‘ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশিপে’ জায়গা পান এবং ন্যাশনাল ইয়ুথ চ্যাম্পিয়ন প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন।
- 2014 সালে ব্যাংককে যুব অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় তিনি তার প্রথম আন্তর্জাতিক মেডেল জিতেছিলেন।
- 2015 সালের অল ইন্ডিয়া ইন্টার-ইউনিভার্সিটি অ্যাথলেটিক্সে 81.04 মিটার বর্শা নিক্ষেপ করে জুনিয়র বিভাগে আগের বিশ্ব রেকর্ডটি ভেঙেছিলেন নীরজ চোপড়া।
- 2016 সালে নীরজ চোপড়া দুটি গোল্ড মেডেল জিতেছিলেন, ‘বিশ্ব জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ’ ও ‘সাউথ এশিয়ান গেমস’ প্রতিযোগিতায়।
ভারতীয় সেনাবাহিনী
দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে নীরজ চোপড়ার চোখ ধাঁধানো পারফরমেন্স তাকে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। 2016 সালে তিনি ভারতীয় সৈন্যদলে যোগ দিয়েছলেন। তিনি প্রথমে রাজপুতানা রাইফেলস-এ নায়েব সুবেদার পদে যুক্ত হন। পরবর্তীতে তিনি প্রোমোশন পেয়ে হয়ে সুবেদার পদে যুক্ত হন। তিনি এখনো ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত রয়েছেন।
তিনি চাইলে ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দেওয়ার পর খেলা ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তার স্বপ্নকে ছেড়ে দেননি। সেনাবাহিনীতে কাজের পাশাপাশি তিনি প্র্যাক্টিস চালিয়ে যেতে থাকেন।
এরপর নীরজ চোপড়ার বড় জয় ছিল “2017 এশিয়ান অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপ”; এই বছর তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন।
নীরজ চোপড়ার 2020 টোকিও অলিম্পিক জয়
4 আগস্ট 2021 সালে নীরজ চোপড়া জাপান জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের প্রতিনিধি হয়ে অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পান। ফাইনালের জন্য তিনি প্রথম প্রথম স্থান অধিকার করে কোয়ালিফাই করেন।
7 আগস্ট 2020 টোকিও অলিম্পিকের ফাইনাল খেলায় তিনি স্বর্ণপদক (gold medal) জিতেছিলেন। গর্বিত হয় সকল ভারতবাসী। প্রসঙ্গত নীরজ চোপড়াই হলেন প্রথম ভারতীয় অলিম্পিয়ান যিনি অ্যাথলেটিক্সে স্বর্ণপদক জয় করেছেন।
পুরস্কার ও সম্মান
নীরজ চোপড়া বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখ্য কিছু পুরস্কার হলো –
- অর্জুনা অ্যাওয়ার্ড (Arjuna Award) – 2018 সাল
- বিশিষ্ট সেবা মেডেল (Vishisht Seva Medal) – 2020 সাল
- মেজর ধ্যান চাঁদ খেল রত্ন অ্যাওয়ার্ড (Major Dhyan Chand Khel Ratna Award) – 2021 সাল
- পরম বিশিষ্ট সেবা মেডেল (Param Vishisht Seva Medal) – 2022 সাল
- পদ্মশ্রী (Padma Shri) – 2022 সাল
এক কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসে বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো প্রতিযোগিতায় শীর্ষ স্থান দখল করা যেন একটি রূপকথা। এই রুপকথার বাস্তব নায়ক হলেন নীরজ চোপড়া, যিনি তার অধ্যবসায় এবং সাধনার ফলে এই স্থানে নিজেকে নিয়ে যেতে পেরেছেন। প্রতিযোগিতায় হেরে যাওয়া, আঘাত পেয়ে খেলা থেকে বাদ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি নানান প্রতিকূলতা সত্ত্বেও তিনি কখনও হার মেনে নেননি, যার ফলে বিভিন্ন বাধা-ব্যর্থতা কাটিয়ে তিনি সফলতা অর্জন করেছেন।
আশা করি তোমাদের এই প্রবন্ধটি পড়ে ভালো লাগলো। বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে একদম ভুলো না। এইরকম আরো প্রবন্ধ পাওয়ার জন্য যুক্ত থাকো আমাদের কেরিয়ার বন্ধুর ওয়েবসাইট (Careerbondhu.com)-এর সাথে। বিভিন্ন আপডেট পাওয়ার জন্য আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেল জয়েন করতে পারো – https://telegram.im/@careerbondhu
পর্ব সমাপ্ত!
বিশেষ দ্রষ্টব্য
- এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer।
- নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error।