Ratan-Tata
Category – Biography

রতন টাটার জীবনী শুরু করার আগে, টাটা গোষ্ঠী বা TATA Group সম্পর্কে কিছু কথা জেনে নিই।

TATA Group

টাটা (TATA), এই নামটির সাথে আমরা সকলেই পরিচিত। ভারতের অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন শিল্প গোষ্ঠী হল টাটা গোষ্ঠী (TATA Group)। এটি হল একটি ভারতীয় মাল্টিন্যাশনাল সংস্থা, যার মেইন অফিস মুম্বাই শহরে অবস্থিত। প্রায় 150 টি দেশে টাটা গ্রুপের পণ্য ও পরিষেবা প্রচলিত রয়েছে।

Tata group
Tata Group

টাটা গ্রুপের প্রায় 29টি সংস্থা রয়েছে। নুন থেকে শুরু করে বড় ট্রাক, মোটর সকল পণ্য ও পরিষেবার সুযোগ রয়েছে। টাটা গ্রুপের কিছু বিখ্যাত সংস্থা হল – Tata Consultancy Services (TCS), Tata Consumer Products (salt, tea etc.), Tata Motors, Tata Power, Tata Steel, Voltas, Titan Company ইত্যাদি।

1868 সালে টাটা গ্রুপের প্রতিষ্ঠা করেন জামসেদজি টাটা (Jamsetji Tata), এই জন্য তাঁকে “ভারতীয় শিল্পের জনক (father of Indian industry)” বলা হয়।

কিন্তু জামসেদজি টাটা কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করলেও টাটা গ্রুপকে এক নতুন মোড় দেন তাঁর প্রপৌত্র রতন টাটা। তিনি টাটা গ্রুপকে পৃথিবীর অন্যতম একটি বিখ্যাত কোম্পানিতে পরিণত করে তোলেন। তাই টাটা গ্রুপের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে রতন টাটার নাম।

ratan-tata
Ratan Tata and Tata Group

রতন টাটার জন্ম ও পরিবার

রতন টাটার পুরো নাম রতন নাভাল টাটা (Ratan Naval Tata)। তিনি 1937 সালে 28শে ডিসেম্বর বোম্বে (বর্তমানে মুম্বাইয়ে) জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন নাভাল টাটা এবং মাতা ছিলেন সুনি টাটা। মাত্র দশ বছর বয়সে তাঁর মা, বাবা পৃথক হয়ে যায়। তারপর থেকে তিনি ঠাকুমার কাছে থাকতেন।

রতন টাটার শিক্ষাজীবন

রতন টাটা একজন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি তাঁর শিক্ষাজীবনে বহু স্কুল পরিবর্তন করেছেন। তাঁর প্রথম স্কুল মুম্বাইয়ের ক্যাম্পিয়ন স্কুল, যেখানে তিনি অষ্টম শ্রেণী অবধি পড়েছিলেন। তারপর তিনি মুম্বাইয়ের ক্যাথেড্রাল ও জন কানন স্কুল এবং সিমলার বিশপ কটন স্কুলে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হন। 1955 সালে তিনি নিউ ইয়র্ক যান এবং সেখানে রিভারডেল কান্ট্রি স্কুল থেকে তাঁর হাই স্কুল (high school) সম্পন্ন করেন।

স্কুল জীবন শেষ হওয়ার পর, 1962 সালে কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেকচারে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এখানেই তাঁর শিক্ষাজীবন সমাপ্ত হয়নি।

1975 সালে তিনি হার্ভার্ড বিজনেস স্কুলে থেকে বিজনেস ও অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রী কোর্স সম্পন্ন করেন।


আমাদের Facebook পেজ লাইক করার অনুরোধ রইল। ↓


রতন টাটার কর্মজীবন

পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি বিদেশেই তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি আমেরিকার জোনস অ্যান্ড ইমনস নামে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে চাকরি করতেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল আমেরিকাতেই স্থায়ী (settle) হওয়ার, কিন্তু এমনটা হয়নি। তাঁর ঠাকুমা হঠাৎ অসুস্থ হওয়ার ফলে তাঁকে আমেরিকা ছেড়ে ভারতবর্ষে চলে আসতে হয়।

ভারতে এসে তিনি প্রথমে International Business Machines (IBM) কর্পোরেশনে চাকরি করেন। কিন্তু টাটা গ্রুপের সেই সময়কার চেয়ারম্যান ছিলেন JRD (Jehangir Ratanji Dadabhoy) Tata, তিনি রতন টাটার অন্য কোম্পানিতে চাকরি করা পছন্দ করেননি। তাই তিনি টাটা গ্রুপে তাকে কাজের সুযোগ দেন।

1961 সালে রতন টাটা কর্মচারী হিসাবে টাটা গ্রুপের সাথে যুক্ত হন। তিনি টাটা স্টিলে সামান্য একটা কাজ থেকে কর্মজীবন শুরু করেন। তাঁর বুদ্ধিমত্তা ও কাজের প্রতি উৎসাহ তাঁকে ধীরে ধীরে টাটা গ্রুপের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হতে সাহায্য করে। 1971 সালে ন্যাশনাল রেডিও অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির (NELCO) ডিরেক্টর-ইন-চার্জ হিসাবে রতন টাটা নির্বাচিত হন।

careerbondhu.com whatsapp channel

টাটা গ্রুপের উন্নতি

টাটা গ্রুপ যখন বিপুল লোকসানে চলছিল তখন JRD টাটা তাঁর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ করেন এবং রতন টাটাকে চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ দেন। 1991 সালে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হন রতন টাটা। টাটা গ্রুপের লোকসানের সময় রতন টাটা কম্পানিকে আশার আলো দেখিয়েছিলেন। তাঁর চেয়ারম্যান পদে আসার পর থেকে টাটা গ্রুপ আবার উন্নতি করতে শুরু করে।

Tata Indica
Tata গ্রুপের প্রথম ভারতীয় গাড়ি Tata Indica

রতন টাটা চেয়ারম্যান পদে আসার পর কিছু উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যেমন 1998 সালে টাটা কোম্পানির প্রথম ভারতীয় গাড়ি ‘টাটা ইন্ডিকা’ তৈরি করা, টাটা টি, টেটলি, টাটা মোটরস, টাটা স্টিল ইত্যাদি বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবার ব্যবসা শুরু করা। এরপরই ভারতীয় ইন্ডাস্ট্রির তালিকায় রেজিস্টার হয় টাটা গ্রুপের নাম।

রতন টাটার ভাবনায় বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ি অর্থাৎ টাটা ন্যানো তৈরি হয়, যা মধ্যবিত্ত মানুষের কাছে চারচাকা গাড়ির স্বপ্ন সাধ্যের মধ্যে এনে দেয়।

TATA nano
TATA nano গাড়ি

টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি 21 বছর ছিলেন। 2012 সালে 28শে ডিসেম্বর তিনি নিজের পদত্যাগ করেন এবং সাইরাস মিস্ত্রিকে চেয়ারম্যান করেন। তিনি টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান পদ থেকে অবসর নিলেও টাটা গ্রুপের সাথে তিনি এখনো যুক্ত আছেন।

টাটা গ্রুপকে যেন রতন টাটা মাটি থেকে তুলে আকাশ ছুঁয়ে দিয়েছিলেন। তিনি চেয়ারম্যান হিসাবে থেকে টাটা গ্রুপের আয় প্রায় 40 গুণ এবং লাভের পরিমাণ 50 গুণ করে তোলেন।

রতন টাটার কিছু উল্লেখযোগ্য কাজ

রতন টাটা যেমন ব্যবসার কথা ভাবতেন সেরকমই সাধারণ মানুষের কথাও ভাবতেন।

2008 সালে তাজ হোটেলে হামলার পর তিনি নিজে কর্মীদের বাড়ি গিয়ে সাহায্য করেছেন। কর্মীদের চিকিৎসা থেকে শুরু করে, হোটেল বন্ধ থাকাকালীন কর্মীদের বেতন দেওয়া এবং আশে-পাশে যাদের যা ক্ষতি হয়েছে, তার ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন রতন টাটা।

Ratan Tata
Ratan Tata ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি

জনসাধারণের কথা ভেবে রতন টাটা, টাটা ট্রাস্ট থেকে 750 মিলিয়ন টাকা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের সেন্টার ফর নিউরোসায়েন্সকে উপহার দিয়েছেন, অ্যালঝাইমার্স রোগের কারণ গবেষণা করার জন্য৷

এছাড়াও তিনি বহু স্কুল কলেজের উন্নতির জন্য অর্থ দাণ করেছেন।

তিনি একজন পশুপ্রেমী। পথকুকুর এবং বিড়ালদের জন্য তিনি নানাধরণের সেবামূলক কাজ করেছেন।

পুরুস্কার

2000 সালে রতন টাটা ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হন।

2008 সালে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মবিভূষণ উপাধিতে রতন টাটা ভূষিত হন।

ratan tata padmabivushan
রতন টাটা পদ্মবিভূষণ পুরুস্কার উপাধি গ্রহণ করছেন

ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি রতন টাটা (Ratan Tata) তাঁর কর্মের জন্য অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মানও পেয়েছেন৷

রতন টাটা এমন একজন ব্যক্তি, যিনি কখনো মিথ্যা চাকচিক্যে বিশ্বাস করেন না। তাঁর সাথে কাজ করতে কর্মচারীদেরও কোনসময় অসুবিধা হয় নি। তিনি শুধুই একজন শিল্পপতি নন, একজন সমাজসেবী, পশুপ্রেমী ও দূরদর্শী মানুষ।

ব্যবসার পাশাপাশি তিনি মানুষের পাশে থেকে মানব সমাজের কল্যাণের কাজকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনি সমাজ কল্যাণের কাজে তাঁর অর্জিত অর্থের 60% – 70% অর্থ দাণ করেছেন।

Ratan Tata
রতন টাটা

‘রতন’ শব্দের অর্থ রত্ন। নামের অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তিনি যেন ভারতের প্রকৃত রত্নে পরিণত হয়েছেন। তাঁর অধ্যবসায় এবং কাজ আগামী নতুন প্রজন্মকে প্রতিদিন অনুপ্রাণিত করে।

আশা করি রতন টাটার গল্প পড়ে তোমাদের ভালো লাগলো। এরকম আরো পোস্ট পাওয়ার জন্য কেরিয়ার বন্ধুর ওয়েবসাইটে https://careerbondhu.com/ নজর রাখো।

পর্ব সমাপ্ত!


নিয়মিত আপডেট পাওয়ার জন্য ফলো করুন↓

WhatsApp Channel | Telegram Channel | Facebook Page


careerbondhu-telegram-channel

বিশেষ দ্রষ্টব্য

  • এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer
  • নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error
error: Content is protected !!