Dietician

Category – Profession

স্বাস্থ্যই সম্পদ। আর সেই সম্পদকে রক্ষা করতে দরকার সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার। বর্তমান যুগ দ্রুততার যুগ। ইঁদুর দৌড়ে দৌড়তে গিয়ে আমরা সকলেই হয়ে পড়েছি ব্যস্ত। তাই বেঁচে থাকার প্রয়োজনে যা যা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই সব কাজগুলির জন্য সময় গিয়েছে কমে। ফলত্ব স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমরা কেউই আর যত্নবান নই। সময় বাঁচাতে ফ্রেশ খাবারের জায়গায় রান্না ঘরে স্থান হয়েছে বিভিন্ন ফ্রোজেন ফুড বা ফাস্ট ফুডের। যার ফলে শরীরে সঠিক পুষ্টি পৌঁছছে না। আর তাই অপুষ্ট শরীরে বাসা বাঁধছে বিভিন্ন রোগ।

‘Cure is better than prevention’.

অপুষ্টি, দুর্বল অনাক্রম্যতা, বিভিন্ন রোগ ইত্যাদি প্রতিরোধে প্রধান উপায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস। আর তার জন্য দরকার সঠিক ডায়েট প্ল্যান। যারা এই কাজটি করে আমাদের বিশেষভাবে সাহায্য করেন তারাই ডায়েটেশিয়ান।

ডায়েটিশিয়ান (Dietician) কাদের বলা হয়?

জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন, অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব, দূষণ ইত্যাদি কারণে বর্তমানে মানুষ বিভিন্ন রোগব্যাধিতে ভুগছেন। দেহে প্রয়োজনীয় শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদান সঠিকভাবে গ্রহণ করে দেহের বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণে সহায়তা প্রদানই পুষ্টি।

বয়স, ওজন, দৈনন্দিন কাজের ধরণ, শারীরিক সমস্যার কথা মাথায় রেখে যারা দেহের পুষ্টি সাধনে সাহায্য করেন, তাদের ডায়েটিশিয়ান বলা হয়। ডায়েটিশিয়ান (Dietician) যার বাংলা অর্থ পুষ্টিবিদ।

ডায়েটিশিয়ানরা কি ধরনের কাজ করেন?

পুষ্টিবিদ বা ডায়েটিশিয়ান সুস্বাস্থ্যর জন্য এবং দেহে প্রয়োজনীয় পুষ্টির মাত্রা সঠিক রাখার জন্য খাদ্যভ্যাস ও খাওয়ার রুটিন সম্পর্কে বিভিন্ন পরামর্শ ও চার্ট বানিয়ে দেন।

এই পেশাটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যদিও সকল ডায়েটিশিয়ানদেরই কাজ দেহে পর্যাপ্ত পুষ্টির জোগান দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া কিন্তু তাদের কর্মক্ষেত্র অনুযায়ী বর্তমানে এই পেশাটিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নীচে তা আলোচনা করা হল।

  • কমিউনিটি ডায়েটিশিয়ান (Community Dietician) – কমিউনিটি ডায়েটিশিয়ানরা World Health Organisation (WHO), Public Health Groups, Daycare Centres and Health Clubs গুলির সাথে যুক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন। বর্তমানে কমিউনিটি ডায়েটিশিয়ানদের চাহিদা বাড়ছে।
  • ক্লিনিক্যাল ডায়েটিশিয়ান (Clinical Dietician) – এই ডায়েটিশিয়ানরা সাধারণত চিকিৎসাক্ষেত্রগুলির সাথে জড়িত থাকেন। বিভিন্ন রোগীর ক্লিনিক্যাল হিস্ট্রি পর্যবেক্ষণ করে, রোগীর দেহে পুষ্টির ঘাটতি পূরণে পরামর্শ প্রদান করেন। চিকিৎসকের চিকিৎসার পাশাপাশি উপযুক্ত খাদ্যাভ্যাসের সাহায্যে রোগীকে দ্রুত সুস্থ করে তোলাই এনাদের প্রধান কাজ। বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি হাসপাতালের সাথে এনারা যুক্ত হয়ে কাজ করেন।
  • স্পোর্টস ডায়েটিশিয়ান (Sports Dietician) – যারা নিয়মিত শরীর চর্চা বা খেলাধূলা করেন তাদের দেহে পুষ্টির উপাদানগুলির প্রয়োজনীয়তা সাধারণ মানুষের তুলনায় ভিন্ন হয়। সঠিক পুষ্টি ছাড়া খেলাধূলা বা শরীর চর্চা করলে, তা প্রাণহানিও ঘটাতে পারে। যে সব ডায়েটিশিয়ান স্পোর্টস পার্সনদের ডায়েট চার্ট প্রস্তুত করে দেন, তারা স্পোর্টস ডায়েটিশিয়ান।
  • জেরিয়াট্রিক ডায়েটিশিয়ান (Geriatric Dietician) – মূলত জেরিয়াট্রিক ডায়েটিশিয়ানরা বৃদ্ধ মানুষের সুস্থ রাখার জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ডায়েট চার্ট তৈরি করেন। এই ধরনের ডায়েটিশিয়ানরা বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি হাসপাতালে বৃদ্ধ-রোগীদের সুস্থতায় সহায়তা করেন।
  • পেডিয়াট্রিক ডায়েটিশিয়ান (Pediatric Dietician) – পেডিয়াট্রিক ডায়েটিশিয়ানরা শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের (18 বছরের নীচে) সুস্থ শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য সুষম ও পুষ্টিকর ডায়েট প্ল্যান তৈরি করেন। শিশু হাসপাতাল সহ বর্তমানে বহু স্কুলও এই পেডিয়াট্রিক ডায়েটিশিয়ানদের নিয়োগ করে থাকে।
  • রিসার্চ ডায়েটিশিয়ান (Research Dietician) – একজন রিসার্চ ডায়েটিশিয়ান বিভিন্ন ধরনের খাবার ও তাদের পুষ্টি ও গুণগত মান সম্পর্কে গবেষণা করেন। প্রতিটি মানুষ ভিন্ন তাই তাদের দেহে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাও ভিন্ন। বিভিন্ন বিষয়ের উপর নির্ভর করে এনারা এই সব ডায়েট প্ল্যান তৈরি করেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এনারা নিযুক্ত হয়ে কাজ করতে পারেন।
  • ফুডসার্ভিস ডায়েটিশিয়ান (Foodservice Dietician) – বিভিন্ন বড় বড় খাদ্যপ্রস্তুত কোম্পানি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় খাদ্যের গুণগত ও পুষ্টিগত মান সঠিক রাখতে এই ফুডসার্ভিস ডায়েটিশিয়ানরা যুক্ত হন। বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য খাদ্য পরিকল্পনায় পুষ্টির মাত্রা সঠিক রাখতে ফুডসার্ভিস ডায়েটিশিয়ানরা অংশগ্রহণ করেন।

 

ডায়েটিশিয়ান হবার জন্য কি যোগ্যতার প্রয়োজন?

একজন ডায়েটিশিয়ান বা পুষ্টিবিদ হওয়ার জন্য উচ্চমাধ্যমিকে রসায়নবিদ্যা (Chemistry), জীববিদ্যা (Biology) ও পুষ্টিবিদ্যা (Nutrition) এই বিষয় নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। উচ্চমাধ্যমিক বা সমতুল (10+2) পরীক্ষা 45% নাম্বার নিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া প্রয়োজন। এই নাম্বারের মাত্রা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভিন্ন হয়।

ডায়েটিশিয়ান হবার কয়েকটি কোর্স করা হল –

  • Certificate in Dietetics (1 year)
  • Diploma in Diet Assistant (1 year)
  • Diploma in Nutrition and Dietetics (3 year)
  • B.Sc. in Nutrition and Dietetics (3 year)
  • B.Sc. in Clinical Nutrition and Dietetics (3 year)
  • M.Sc. in Nutrition and Dietetics (2 year)
  • M.Sc. in Clinical Nutrition (2 year)
  • PGDM in Dietetics and Applied Nutrition (2 year)
  • PG Diploma in Dietetics (1 year)
  • PG Diploma in Dietetics and Public Health (1 year) ইত্যাদি।

এই কোর্সগুলিতে মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হওয়া যায় কিন্তু কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। এই কোর্সগুলির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় কোর্স হল নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিক্সে B.Sc (B.Sc. in Nutrition and Dietetics).

নীচে কয়েকটি ইউনিভার্সিটির নাম দেওয়া হল যেখানে নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিক্স পড়ানো হয়ে থাকে –
  • Calcutta University
  • Amity University
  • Lovely Professional University (LPU)
  • Maharishi Markandeshwar University
  • Chandigarh University (CU)
  • Shoolini University ইত্যাদি।

একজন সফল ডায়েটিশিয়ান (Dietician) হবার জন্য কি কি দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?

একজন সফল ডায়েটিশিয়ান (Dietician) হবার জন্য যে যে বিষয়ে দক্ষ হতে হয় সেগুলি হল –

  • কমিউনিকেশন স্কিলে দক্ষ। রোগী বা গ্রাহকদের কথা শোনা ও তাদের খাদ্য সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করার জন্য কমিউনিকেশন স্কিলে দক্ষ হতে হবে।
  • ধৈর্য থাকা প্রয়োজন
  • রোগীর প্রয়োজন অনুসারে তার ডায়েট চার্ট তৈরি করার দক্ষতা
  • এই পেশায় নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন।

পেশার ভবিষ্যৎ কেমন?

বর্তমানে মানুষ নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তায় থাকেন, তাই সঠিক ও পুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য ডায়েটিশিয়ানদের সাথে আলোচনা করেন। শিশুদের ক্ষেত্রে খাদ্যের পরিমাণের থেকে খাদ্যের পুষ্টির মাত্রার উপর গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যিক। তাই বর্তমানে মায়েরা শিশুর সঠিক পরিমাণ পুষ্টির জন্য ডায়েটিশিয়ানদের পরামর্শ নেন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেরই শরীরে পুষ্টির মাত্রা সঠিক রাখার জন্য ও সুস্থ থাকার জন্য ডায়েটিশিয়ানদের সাহায্য একান্ত প্রয়োজন।

বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি হাসপাতালে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এনারা নিজেদের চেম্বার খুলে উপার্জন করতে পারেন। দেশে-বিদেশে প্রচুর সুযোগ থাকায় এই পেশার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কিছু ক্ষেত্রে শিক্ষকতার সাথেও এনারা যুক্ত হতে পারেন।

এই পেশায় কেমন বেতন পাওয়া যেতে পারে?

একজন ডায়েটিশিয়ানদের বার্ষিক আয় প্রায় 5-25 লাখ হয়ে থাকেন। কাজের অভিজ্ঞতা ও কর্মস্থানের উপর নির্ভর করে বেতন পরিবর্তিত হয়।

পর্ব সমাপ্ত!

careerbondhu-telegram-channel

বিশেষ দ্রষ্টব্য

  • এই নিবন্ধে ব্যবহৃত তথ্য ইন্টারনেট, সংবাদ পত্র, পত্রিকা, প্রকাশিত রিপোর্ট ইত্যাদি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। নিবন্ধে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোর্সের নাম ইত্যাদি শুধুমাত্র শিক্ষামূলক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আরো জানার জন্য এই পাতাটি পড়ে নেবার অনুরোধ রইল → Disclaimer
  • নিবন্ধটি আমরা যথাসম্ভব ত্রুটি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি, তথ্যে কোনরূপ ত্রুটি চিহ্নিত হলে তা অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি হিসাবে গণ্য হবে, চিহ্নিত ত্রুটি এই পাতা থেকে তা আমাদের জানানো যেতে পারে → Report an error
error: Content is protected !!